মেহেরপুর প্রতিনিধি : বয়সের ভারে ন্যুব্জ। চামড়ায় ভাঁজ। সাদা চুল। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি প্রখর। মনোবল তীব্র। এমন অদম্য শক্তিতে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্ন বুঝে খাতায় উত্তর লেখায় ব্যস্ত মেহেরপুরের  বাছিরন নেছা।

তিনি ৬৫ বছর বয়সে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষায় (পিএসসি) এবার অংশ নিয়েছেন। জেলা শিক্ষা বিভাগ বলছেন- বাছিরনের এমন দৃষ্টান্ত দেশের বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে। 

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মটমুড়া ইউনিয়নের হোগলবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়ায় বাছিরুনের বাড়ি। তিনি ওই গ্রামের পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এবার হোগলবাড়িয়া মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রে বসে শিশুদের সাথে (পিএসসি) পরীক্ষা দিচ্ছেন।

বৃদ্ধ বয়স দেখে প্রথমে তাঁকে স্কুলে ভর্তি নিতে চায়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরের বছর আবার গেলে তাঁর আগ্রহ দেখে স্কুলে ভর্তি নিতে বাধ্য হয়। ঝড়-বৃষ্টি, খরাতে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে না গেলেও তিনি নিয়মিত স্কুল গেছেন। শিশুদের সাথে গলাছেড়ে পড়াশুনা করেছেন। টিফিনের ফাঁকে শিশুদের সঙ্গে কানামাছি খেলতেন। ছুটির ঘণ্টা পড়লে সবার সঙ্গে গল্প আর মজা করতে করতে বাড়ি ফিরতেন।

বাছিরন নেছা দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সারাবছর মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। প্রস্তুতিও ভাল। পরীক্ষা ও রেজাল্ট ভাল হবে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, স্কুল থেকে বাড়িতে গিয়ে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা পড়তে বসি। পড়তে খুব ভাল লাগে। প্রতিজ্ঞা করেছি যতদিন শরীর চলবে, ততদিন পড়াশুনা চালিয়ে যাব।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক হেলাল উদ্দিন জানান, ইচ্ছার কাছে লজ্জা নেই, শেখার কোন বয়স নেই। এটা চোখে আঙুল দিয়ে বাছিরন দেখিয়ে দিল। বাছিরনের পরীক্ষার প্রস্তুতি দেখে আমি খুশি। সে পড়াশনায় খুব ভাল এবং নিয়মিত স্কুলে আসেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাঁকে নানী বান্ধবী বলে ডাকে। পড়াশুনায় মনোযোগী। অল্পে সবকিছু বুঝতে পারে। সবসময় শুদ্ধ উচ্চারণে পড়া ও কথা বলেন। তবে বাংলা গল্প, কবিতা ও ইসলাম ধর্ম বিষয়ে বেশি আগ্রহী।

স্কুলের সহপাঠিরা বলেন, আমরা ক্লাসে বাছিরন নানীকে পেয়ে অনেক খুশি। তার সাথে খেলাধুলা করি। আমাদের নানি বান্ধবীর সাথে পড়ালেখা করতে ভাল লাগে। ক্লাসে তার সাথে অনেক মজা করি।

মেহেরপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তৌফিক-উজ্জামান দ্য রিপোর্টকে জানান, বাছিরন নেছা পিএসসি পরীক্ষা দেবেন এটা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানাতে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রথমে ভয় পায়। মনে করেছিলেন বিষয়টাতে বিরক্ত হবেন শিক্ষা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিষয়টা শোনামাত্রই আমরা বাছিরনের পিএসসিতে অংশ নেওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি শেষ করতে নির্দেশ দেই। কেননা, বাছিরনের এমন অদম্য ইচ্ছা দেশের বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমকে উৎসাহ জোগাবে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএনইউ/এপি/নভেম্বর ২০, ২০১৬)