সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদন
সাত ঝুঁকিতে সামষ্টিক অর্থনীতি
অবকাঠামো ও বিদ্যুৎসহ সাত বিষয়কে সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য বড় ঝুঁকি বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ সব বিষয় উঠে এসেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, অবকাঠামো, বিশেষ করে রাস্তাঘাট ও বিদ্যুৎ সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যতম ঝুঁকি। এ বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক গতিশীলতা ধরে রাখতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। তবে যেটি দরকার তা হচ্ছে সকল রাজনৈতিক সংঘাত এড়িয়ে অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার ও ব্যক্তি খাতের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্পর্কের আস্থা স্থাপন। ব্যবসা ব্যয় কমিয়ে আনার জন্য সকল পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি অর্জন করতে হবে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সামষ্টিক অর্থনীতির অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এ অর্জন ধরে রাখার ক্ষেত্রে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি। এর ফলে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অসন্তোষ ব্যবসা বাণিজ্যে মন্দা সৃষ্টি করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, এখনও অবকাঠামোগত অপর্যাপ্ততা বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিরবচ্ছিন্ন রাখা।
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক বহুমুখিতার অভাব এবং কর্মসংস্থানের জন্য এখনও কৃষির ওপর অধিক নির্ভরশীলতা। চতুর্থত, ব্যবসা করার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সীমিত সুযোগ। পঞ্চমত, অধিক সংখ্যক অদক্ষ শ্রমশক্তি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে তুলনামূলক স্বল্প বরাদ্দ। এ ছাড়া শিক্ষা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার নিম্নমান, বিশেষত গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য।
ষষ্ঠত, বন্দর ও সমুদ্র পরিবহনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশকে উন্নতি সাধন করতে হবে। মংলা সমুদ্রবন্দরের সংস্কার পুনর্জীবন এবং গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে হবে। কেননা গভীর সমুদ্রবন্দরই এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান করতে পারে।
সপ্তমত, সামষ্টিক অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও ঘনত্ব বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঋণাত্মক প্রভাব ফেলে। গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার যদিও ১ দশমিক ৩৪ শতাংশে স্থির ছিল, তারপরও ঠাসাঠাসি ও অতিরিক্ত ভিড় গ্রামীণ বাজার থেকে শুরু করে বড় শহর পর্যন্ত সব জায়গাতেই পণ্যদ্রব্য, মানুষজন ও প্রয়োজনীয় ইউটিলিটি সেবার অবাধ প্রবাহকে ব্যাহত করছে। সর্বত্র জনসংখ্যার অতিরিক্ত চাপের কারণে জমির সংস্থান কমে যাচ্ছে, যা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাধার সৃষ্টি করছে।
অবশ্য বাংলাদেশের অর্জন একটি সুবিধাজনক জনমিতিক পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। যার সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন। এর জন্যও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে ব্যয় বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত ৫ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ, মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, রাজস্ব আয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন এবং সরকারের ঋণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়েছে বাংলাদেশ।
এ ছাড়া বহিঃখাতের ক্ষেত্রে দেখা যায়, রফতানি ও আমদানি, চলতি হিসাব উদ্বৃত্ত, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার, প্রবাসী আয়, প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং বৈদেশিক সাহায্যের ক্ষেত্রে কখনও অগ্রগতি আবার কখনও স্থির ছিল।
মুদ্রা খাতে মুডিস এবং এস অ্যান্ড পি উভয়ের রেটিংয়ে গত চার বছর ধরেই বাংলাদেশ স্থিতিশীল সার্বভৌম রেটিং বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। রাজস্ব নীতিতে ব্যাপক সংস্কার এবং খোলামেলা মুদ্রানীতির কারণে প্রাপ্ত স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এ অর্জনের মূল নিয়ামক। ২০১০-১১ অর্থবছরের পুরো সময়ে দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতির চাপ এবং নিট বৈদেশিক সম্পদের ব্যাপক বৃদ্ধি সত্ত্বেও মুদ্রা খাতের সামগ্রিক অর্জন ছিল ভারসাম্যপূর্ণ।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এনডিএস/এইচএসএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪)