খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আর মাত্র একদিন পর বুধবার প্রথম দফায় খাগড়াছড়ি জেলার ছয় উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সে সঙ্গে নির্ধারণ হবে ৭৭ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভাগ্য। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী সোমবার রাত ১২টার পর প্রচার-প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনও নির্বাচনের সব প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে।

খাগড়াছড়ি জেলার আট উপজেলার মধ্যে বুধবার প্রথম দফা অনুষ্ঠিতব্য ছয় উপজেলায় তিন লাখ ১৩৮ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৫ হাজার ৪৭৯ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৯। ভোটকেন্দ্র ১৪৫ এবং বুথ ৯০৪টি।

ছয় উপজেলায় ১৪৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

নির্বাচন নির্দলীয় হলেও খাগড়াছড়িতে পুরো মাত্রায় দলীয় তৎপরতা চলছে। সে সঙ্গে চলেছে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশও। সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িতেও উপজেলা নির্বাচনকে দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ তাদের মর্যাদার লড়াই হিসেবে বিবেচনা করছে। এ কারণে জেলা পর্যায়ের বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারাও ছুটেছেন প্রতিটি উপজেলায়। তবে সে ক্ষেত্রে বিএনপি বেশ এগিয়ে ছিল। খোদ খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়া প্রতিদিন অন্তত ২০টি করে টেলিকনফারেন্স করে দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচিত করার জন্য ভোটারদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

খাগড়াছড়ির ছয়টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ছাড়াও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ, জেএসএস সমর্থিত এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ছয় উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ তিনজন ও দুটিতে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি তিন ও আওয়ামী লীগ পাঁচ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকে বহিষ্কার করেছে।

জেলা রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল খালেক জানান, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন কি না তার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো. শানে আলম (আনারস), জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কংচাইরী মগ (দোয়াত-কলম) ও ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে চঞ্চুমনি চাকমা (মোটরসাইকেল)। এ উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম রেজাউল করিম হেলাল (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

রামগড়ে উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূলত বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদ (ঘোড়া), নাগরিক কমিটির প্রার্থী বহিষ্কৃত জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বেলায়তে হোসেন ভূঁইয়ার (কাপ-পিরিচ) ও আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থী চাইথোয়াই চৌধুরী (মোটরসাইকেল) মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। এ ছাড়াও রামগড়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী একেএম আলীম উল্লাহ (হেলিকাপ্টার), আওয়ামী লীগের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী কাজী মো. সেলিম (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন রিপন (দোয়াত-কলম) ও উশেপ্রু মারমা (টেলিফোন) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

পানছড়িতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী অনিমেষ চাকমা রিংকু (মোটরসাইকেল), আওয়ামী লীগের বকুল চন্দ্র চাকমা (ঘোড়া), ইউপিডিএফ সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমার (কাপ-পিরিচ) মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও পানছড়িতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বহিষ্কৃত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি জিমি চাকমা (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মাটিরাঙ্গায় চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সামছুল হক (মোটরসাইকেল), বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. তাজুল ইসলাম (আনারস) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কাসেম ভূঁইয়া। এ উপজেলায় জামায়াতের মো. আলকাছ মিয়া (কাপ-পিরিচ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মানিকছড়িতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী স্রাগ্য মারমা (দোয়াত-কলম), বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এনাম (আনারস) ও বহিষ্কৃত বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী এসএম রবিউল ফারুক (মোটরসাইকেল) তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করছে পর্যবেক্ষক মহল।

মহালছড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নীলোৎপল খীসা (মোটরসাইকেল) ও ইউপিডিএফ সমর্থিত প্রার্থী এবং বর্তমান চেয়ারম্যান সোনারতন চাকমার (দোয়াত-কলম) নাম আলোচিত হচ্ছে। এ ছাড়া মহালছড়ি চেয়ারম্যান পদে জেএসএস (এমএনএল) গ্রুপের প্রার্থী বিমল কান্তি চাকমা (কাপ-পিরিচ), জেলা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি ক্যজাই মারমা (আনারস) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেয়নি।

নির্বাচনে কাজ করছে নানামুখী সমীকরণ। তাই নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচিত হবেন তার জন্য বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এইচএমপি/এএস/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪)