গুরুত্ব পায় রাজবন্দিদের মুক্তির দাবি
দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে আন্দোলনের ঢেউ ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহরে একুশের কর্মসূচি সফল করতে সভা-সমাবেশ, ইশতেহার বিলি ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার শ্লোগানসহ মিছিল আয়োজন করা হয়। আরেকটি বিষয় হলো এই প্রথম ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরা অধিক সংখ্যায় সভা-সমাবেশে যোগ দেয়, বক্তৃতা করে এবং মিছিলে অংশ নেয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে ছাত্রদের এই সংযোগ আন্দোলনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। ফলে ভাষা আন্দোলন পরিণত হয় গণমানুষের আন্দোলনে।
ভাষা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ভাষার দাবির সঙ্গে আরও কিছু বিষয় শ্লোগানে তুলে ধরেন। যেমন- ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ এর পরই উচ্চারিত হতো ‘রাজবন্দিদের মুক্তি চাই’। এ সময় মুসলিম লীগের কথিত রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে শুধু কমিউনিস্টরাই নয় সমালোচনাকারী যে কোনো দলের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে কারারুদ্ধ ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমদের মতো নেতাও কারাগারে ছিলেন।
এ সময় পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ববঙ্গ সাংগঠনিক কমিটি ভাষাসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কয়েকটি ইশতেহার সার্কুলার করে। তবে তা শুধু কর্মী, সদস্য ও সমর্থকদের জন্য। ১১ ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন’ শিরোনামের এমন একটি সার্কুলারে নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতা এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি ও ছাত্রদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা শেষে লেখা হয়- ‘১৯৪৮ সালের আন্দোলন হইতেও এবারের আন্দোলন অনেক বেশি শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে।… এই সময়ে রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন সঠিকভাবে পরিচালিত হইলে পূর্ববঙ্গের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং বাঙালী ও অন্যান্য জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের আন্দোলন শক্তিশালী হইয়া আগাইয়া যাইবে।’
এ সার্কুলারে আরও বলা হয়, ‘বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা কর- এই দাবি বাঙালী জাতির জাতীয় অধিকারের দাবি, এই দাবি বাঙালী জাতির জন্মগত অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবি। অতএব, রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন বাঙালী জাতির অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।’ একইসঙ্গে বাঙালী, পাঞ্জাবী, সিন্ধী, পাঠান, বেলুচসহ সকল জাতির ভাষা ও কৃষ্টিকে সমমর্যাদা দেওয়ার আন্দোলন বলে একে ঘোষণা করা হয়। কয়েকটি শ্লোগান বাধ্যতামূলকভাবে জনসাধারণের কাছে তুলে ধরার নির্দেশ দেওয়া হয়- ‘পাকিস্তানের সকল ভাষার সমমর্যাদা চাই’, ‘পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতির নিজ নিজ ভাষায় শিক্ষা লাভ করা ও রাষ্ট্র পরিচালনার অধিকার চাই’ এবং ‘বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা চাই’। তবে এ সব সার্কুলার প্রকাশ্যে প্রচার করা হয়নি।
এদিকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার ২১ ফেব্রুয়ারি ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সংলগ্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সকল সভা সমাবেশ নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি বন্দিমুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্রসভা আহ্বান করা হয়। এতে বক্তৃতা করেন জিল্লুর রহমান, নাদেরা বেগম ও শাসমুল হক চৌধুরী। সভায় সকল রাজবন্দির মুক্তির দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় রাজবন্দি মুক্তি আন্দোলন কমিটি নামে একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে আবুল হাশিমের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত সদস্যরা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সভার একটি বড় অংশ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ব্যাপারে মত দিলেও অনেকেই এতে সহিংসতার আশঙ্কায় বিপক্ষে মত দেন।
(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/আরকে/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪)