দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ভিসা ট্রেডিং (চাহিদাপত্র কেনাবেচা)বন্ধ ও দ্রুত ভিসা ইস্যুকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে সৌদি আরব। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে ঢাকাস্থ সৌদি আরব দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ এইচ এম আল মোতাইরির সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এ বিষয়টি আলোচনাকালে এমন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান রাষ্ট্রদূত। এছাড়া পুরুষকর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে এক চতুর্থাংশ নারী কর্মী নেওয়ার শর্ত নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।

রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ ভবনে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর নিজ দফতরে এ সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়।

উভয়পক্ষের আলোচনায় একমত হন, ভিসা ট্রেডিং বা চাহিদাপত্র কেনাবেচার কারণেই সৌদি অরবে বাংলাদেশিদের যাওয়ার খরচ বেড়ে যায়। খরচ কমাতে হলে তাই চাহিদাপত্র কেনাবেচা বন্ধ করতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভিসা ইস্যুকরণ আরও দ্রুত করার দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিলম্ব ও হয়রানির কথাও জানানো হয়। এছাড়াও গামকা কর্তৃক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় বিলম্ব ও হয়রানির বিষয়ে আলোচনা হয়।

জবাবে সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত খুব শিগগিরই গামকার সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণসহ দ্রুত ভিসা ইস্যুকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান। সম্প্রতি ওমরাহ ভিসা চালু হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন দুই আড়াই হাজারের মতো ভিসা ইস্যু করতে হচ্ছে। দ্রুত ভিসা ইস্যুকরণে দূতাবাসে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগের কথাও জানান তিনি।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সব সময় ভালো ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বাংলাদেশ থেকে সব খাতে কর্মী নেওয়া শুরু হওয়ায় তিনি রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান। মন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি করে চিকিৎসক-প্রকৌশলীসহ দক্ষ কর্মী নিতে সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামছুন নাহার, অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আজহারুল হক, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. বদরুল আরেফিন, যুগ্ম-সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ও মোহসিন চৌধুরী এবং সৌদি আরবের চিফ অব কনস্যুলেট ডিভিশনের কাউন্সেলর খালিদ বকস্উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশি কর্মী সৌদি আরবে যাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ২০ লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী সৌদি আরবে বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত আছেন।

এরআগে বৃহস্পতিবার সকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধীন ডিপ্লোমেসি ট্রেনিং প্রোগামের (ডিটিপি) নির্বাহী পরিচালক প্যাট্রিক আর্লে এক সাক্ষাতে মিলিত হন। সাক্ষাৎকালে মন্ত্রী প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য অভিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, দরিদ্র মানুষগুলো ভাগ্য বদলানোর আশায় বিদেশে কাজ করতে যায়। কাজেই তাদের অধিকারগুলো যেন লঙ্ঘিত না হয় সেজন্য মধ্যপ্রাচ্যসহ সর্বত্র আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ করা উচিত।

পরে মন্ত্রী ডিটিপির কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী এ সময় বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে যায় তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ। বিদেশে অনেক সময়েই তাদের সঙ্গে যথাযথ আচরণ করা হয় না। এ ব্যাপারে সবার কাজ করা উচিত।

এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরুর সমন্বয়ক সি আর আবরার, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আজহারুল হক, মন্ত্রীর একান্ত সচিব মু. মোহসিন চৌধুরী, বেসরকারি সংস্থা ওয়ারব্যারি চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুল হক, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের কর্মকর্তা পারভেজ সিদ্দিকীসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপি/ডিসেম্বর ০১, ২০১৬)