নির্ঝর নৈঃশব্দ্যের কবিতা
আয়নায় দেখি
তার কাঁধে ছিলো বুনোহরিণ মধুর। সে পায়ে পায়ে উঠে এলো
ধানক্ষেতে। হেমন্তের ক্ষেত। বামহাতে চেপে ধরলো হরিণটার
গলা। সরোষে দংশন করলো। চিরে দিলো শিরা। রক্তপান
করলো ধীরে। ক্ষেতে আগুন দিলো শেষরাতে। ঝলসে খেলো
রক্তমাংসের সুন্দর। না তাকে আমি চিনি না- সকালে তাকে
আয়নায় দেখি রোজ।
অন্তরালের সড়ক
তার মধ্যে রাতদিন একাকার হয়। শেষরাতে অথবা
দিনশেষে যাকিছু আলো আর আভা দেখা যায়- তাকে অমর
বলে মনে হয়। আসলে এটা একটা খেলা। হিমহাওয়া ছুঁয়ে
পাতা কেনো ঝরে যায়, নীলাভ কুয়াশায় কার মুখ হারায়?
একদিন কুয়াশার দুয়ার খুলে পার হবো অন্তরালের সড়ক।
কেউ জানবে না। সে রোদ আর জোছনার মধ্যবর্তী রূপ চুরি
করে সাজাবে নিজেকে। আহা কী অসহায়!
ছেড়ে দিই
আমার কী অথবা তাহার! বাদাম সমুদ্র নুনস্বাদ বিকিয়ে
দেয়। তারপর সরে যায় তরঙ্গসমেত। চারদেয়াল খুলে রাখে
কমলা বাতাস। অথই জোয়ার হারায় না প্লাবনে। প্লাবন কী
করে নিজেও জানে না। খানিকটা জেনেছে ক্রমে তার জল।
উষ্ণতা ফুরিয়ে যায় অনন্ত সময় ধরে। আসো, হাত ধরে
ছেড়ে দিই ভিড়ে।
কোমল পাথর
ভোরের আকাশ নেমেছে কুয়াশার শরীরে। ছুঁয়ে গেছে
তোমার মাথার উদাস বাঁশবন, চোখের ইঁদারা, আরাত্রি
কম্পমান ওষ্ঠাধর, সঘন বুকের বাদামি চর। কালরাতে
আমি আকাশ ছিলাম- অমলিন জোছনায় একা একেলা। পুড়ে
গেছি ভীষণ তারাদের দেহের আগুনে। আর তারপরে ছাই
নয়- হয়ে গেছি অদ্ভুত কোমল পাথর।
শব্দগন্ধ সন্ধ্যা
শব্দগন্ধ সন্ধ্যায় যে-গান পৃথিবীকে আবেষ্টন করে- আমার
কাছে ছিলো তা ত্বকের নিচে, রক্তের নদীতে। কেউ শুনে নি
এমন পূরবীবেলা মাধুর্য। ওরা গানের পথ ধরে গিয়ে ছিঁড়ে
ফেলে গানের রেখা। যাকিছু আঁকা ছিলো রোদের গায়ে-
দুডানাচিলকে করে সিক্তকথকতা। ওরা ছাতা মাথায় সেজে
থাকে বৃষ্টির দেবতা।