চট্টগ্রামে সিএনজি উদ্ধার নিয়ে মামলা
আইজিপির কাছে প্রতিবেদন চাইল হাইকোর্ট
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : চট্টগ্রামে এক সিএনজি অটোরিকশা উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই চালকের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দাখিল না করায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হকের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট।
সিএনজি ফেরত ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়টি নিস্পত্তি করে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে আইজিপিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নূর মোহাম্মদ আজমি। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ওই সিএনজি অটোরিকশা চালক মারা যাওয়ায় এজাহার মিয়ার ছেলে সাখাওয়াত হোসেন ক্ষতিপূরণসহ সিএনজি ফেরত পেতে, তার পরিবারকে আইনগত সহায়তা প্রদান এবং সিএনজি আত্মসাতের সঙ্গে যে সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে আবেদন করেন।
ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২২ জুন পুলিশের আইজিকে একজন যোগ্যতা সম্পন্ন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে তার প্রতিবেদন ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী সোমবার প্রতিবেদন জমা না দিয়ে ৩ মাসের সময় আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে বলা হয়, মামলার এজাহারভুক্ত দুজন সাক্ষী জাতিসংঘ মিশনে সুদানে রয়েছেন। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আরও তিন মাস সময় প্রয়োজন। এরপর আদালত এই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের বারকোয়াটার থেকে ২০০৯ সালের ৮ জানুয়ারি এজাহার মিয়া নামে এক চালকের সিএনজি অটোরিকশা (চট্ট মেট্রো থ-১১-৬৮৫১) হারিয়ে যায়। ওই দিনই অটোরিকশা হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পাহাড়তলি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সেই চালক।
এরপর তিনি বিআরটিএ-এর মাধ্যমে জানতে পারেন, ভুয়া নম্বর প্লেট সম্বলিত তার হারানো সিএনজি অটোরিকশা (চট্ট মেট্রো-থ ১১-২৯৫৭) ট্রাফিক পুলিশ সদর উদ্ধার করেছে। এরপর ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি উদ্ধার হওয়া অটোরিকশাটিকে নিজের দাবি করে তা ফেরত পাওয়ার জন্য পাহাড়তলি থানায় আবার একটি আবেদন করেন।
অপরদিকে উদ্ধারকৃত সিএনজির মালিকের নাম ঠিকানা খোঁজ করতে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর একটি আবেদন করা হয়। ওই সিএনজি অটোরিকশাটি এজাহার মিয়ার তা সঠিক বলে পাহাড়তলি থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাফিক পুলিশের কাছে প্রতিবেদন দেয়।
এছাড়া অটোরিকশার বডি পরীক্ষার জন্য বিআরটিএর নিকট ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়। পরে বিআরটিএ’ও জানায় অটোরিকশাটি এজাহার মিয়ারই।
এরপর এজাহার মিয়াকে হাজির হতে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে একটি চিঠি পাঠায়। কিন্তু এজাহার মিয়া হাজির হয়নি মর্মে প্রতিবেদন দেয় ট্রাফিক চট্টগ্রাম বিভাগের ট্রাফিক বিভাগের টিআই (প্রশাসন) নজরুল ইসলাম। একইসঙ্গে চালক এজাহার মিয়ার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ফিরোজ কবির একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তিনি আটক হয়ে কিছুদিন কারাগারেও ছিলেন। এরপর বের হলেও তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এজাহার মিয়ার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হওয়ার পর সিএমপি কমিশনারের নিকট একটি আবেদন করেন। সেই আবেদনের জেরে শেষাবধি বিষয়টি আইজিপি পর্যন্ত গড়ায়। পরে আইজিপি বরাবর এই মামলার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেন সার্জেন্ট ফিরোজ কবির।
যেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সিএনজি অটোরিকশা নিতে গেলে ট্রাফিক দুই লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করা হয়েছে বলে এজাহার মিয়া সিএমপি কমিশনারের কাছে আবেদন করেন। পুলিশের নিকট এমন আবেদন করায় ক্ষুব্ধ হয়ে ডিসি কুসুম দেওয়ান, টিআই নজরুল ইসলাম এবং সার্জেন্ট মামুন খুলশি থানায় এজাহার মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য সার্জেন্ট ফিরোজকে চাপ সৃষ্টি করেন। মামলা না করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন তারা। এরপর সার্জেন্ট এজাহার মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এজাহার মিয়া মারা যাওয়ার পর তার ছেলে সাখাওয়াত হোসেন হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ মামলাটি করেন। যেখানে ক্ষতিপূরণসহ সিএনজি ফেরত, তার পরিবারকে আইনগত সহায়তা প্রদান এবং সিএনজি আত্মসাতের সঙ্গে যে সমস্ত পুলিশ কর্মকর্তা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চান।
(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এপি/ডিসেম্বর ০৫, ২০১৬)