দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘আদিবাসীদের নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের অধিকারের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে’ বলে মন্তব্য করেছেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ লক্ষ্যে বহুভাষিক শিক্ষা পদ্ধতির ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে মঙ্গলবার বিকেলে আদিবাসীদের বহুভাষিক শিক্ষা নিয়ে গবেষণা কর্মের ওপর ভিত্তি করে ‘ম্যাপিং অফ মাল্টি-ল্যাঙ্গুয়াল এডুকেশন প্রোগ্রামস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাধর্মী বইয়ের মোড়ক উন্মোচনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ব্র্যাক, ইউনিসেফ, সেফ দ্য চিলড্রেনের সহযোগিতায় গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ (আরডিসি) বইটি প্রকাশ করে।

‘মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের অধিকার মানুষের মৌলিক’ মন্তব্য করে মেনন আরও বলেন, ‘আদিবাসীদের ওপর অন্য ভাষা বা লিপি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। বিশ্বায়নের নামে অন্যের ভাষা নষ্ট করা যাবে না এবং নিজস্ব ভাষারও বিকৃতি ঘটানো যাবে না।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, ‘গবেষণা কর্মে কিছু ভুল আছে। এরপরও আমি এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এ বিষয়ে আমার মন্ত্রণালয়ের তেমন কিছু করার নেই। তবে সরকারকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ‘বহুভাষিক শিক্ষা’র বিষয়টি জাতীয় শিক্ষা নীতির মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। এটি খুবই মহতী প্রয়াস। তবে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’

গবেষণা দলের দলনেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, ‘গবেষণাটি করতে আমাদের এক বছর লেগেছে। আমরা ৬৮টি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর ওপর গবেষণা করেছি। আমরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছি বাংলাদেশে বাংলা ভাষা ছাড়াও আরও ৪৩টি ভাষা আছে। কিন্তু এ সব ভাষায় শিক্ষাদানের কোনো ব্যবস্থা নেই। বেসরকারিভাবে কয়েকটি ভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা চালু থাকলেও সেখানে প্রচুর সমস্যা আছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হলেও এখনও তা গতি পায়নি।’

আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘আদিবাসীদের সঠিক সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে। বর্তমানে আদিবাসীদের ভাষা হুমকির মুখে। মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকেরই আছে। এ জন্য সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।’

‘বহুভাষিক শিক্ষা পদ্ধতি প্রসারের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে’ জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব ফাইজুল কবীর বলেন, ‘আমার এ ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। তবে ইচ্ছা থাকলেও টাকার অভাবে সব কাজ করা সম্ভব হয় না। এরপরও আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, ইউনেসকো বাংলাদেশের অফিসার ইন চার্জ কিচি ওয়াসু, বাংলাদেশে সেফ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইকেল মেকগ্রেথ এবং ব্র্যাকের শিক্ষা বিভাগের পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এমএআর/সা/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪)