দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অমর একুশে গ্রন্থমেলার সার্বিক সৌন্দর্য রক্ষার কথা বার বার বলা হলেও তা তোয়াক্কা না করে নীরবে চলছে বহুমাত্রিক বাণিজ্য। সুকৌশলে মেলার দর্শনার্থীদের ফাঁকি দিয়ে চোখের সামনে এ সব বাণিজ্যে অংশ নিচ্ছে সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে করপোরেট গ্রুপ।

তবে সাধারণ দর্শনার্থীদের চোখ ফাঁকি দিলেও গণমাধ্যম কর্মীদের তৎপরতায় প্রথম দিন থেকেই মেলার নানা অসঙ্গতি স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। একের পর এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হলেও এ অপতৎপরতা রোধ করতে পারেনি মেলা পরিচালনা কমিটি। প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রথম দিন থেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের কাজের সুবিধার্থে ওয়াইফাই ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হতে সময় লাগে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

কোনোরকম স্পন্সরশিপ ছাড়া মেলা পরিচালিত হবে বলা হলেও মেলার দুই প্রাঙ্গণেই চলছে বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি রবির একক প্রচারণা। এক যুগ ধরে প্রকাশকরা মেলার অদূরে পাইরেটেড বই বিক্রি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে এলেও কোনোরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

বাঙালির জাতিসত্ত্বা ও মননের প্রতীক বাংলা একাডেমি পরিচালিত এ মেলায় বিরাজমান এত অসঙ্গতি দেখে মেলায় উপস্থিত অনেকের মনে নানান প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এর নেপথ্যে একটা বড় ধরনের অর্থবাণিজ্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে।

চারুলিপি প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী হুমায়ূন কবীর মেলার অদূরে পাইরেটেড বই বিক্রি সম্পর্কে বলেন, ‘পাইরেটেড বই বিক্রির মধ্যে দিয়ে শুধু আমরাই প্রতারিত হচ্ছি না, বিপুল পরিমাণ তথ্য বিভ্রাট থাকায় নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছে অনুসন্ধিৎসু পাঠক। সুতরাং এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের অবহেলা দুর্ভাগ্যজনক।’

মেলা পরিচালনা কমিটির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ নিয়ে কবি আসাদ চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যে কোনো বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ঠিক থাকা জরুরি। অমর একুশে গ্রন্থমেলার আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন কাজ থেকে কর্তৃপক্ষের সদা তৎপর থাকা উচিত।’

রাজধানীর মিরপুর থেকে আগত এক দর্শনার্থী নাম প্রকাশ না করে দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘মেলার প্রবেশদ্বার অতিক্রম করার আগে বোঝা যায় না এটা বইমেলা না বাণিজ্যমেলা।’

রবি’র প্রচারণার কাজে নিয়োজিতদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রবির এক কর্মী জানান, ‘আমরা এতকিছু জানি না। উপর থেকে দেওয়া আদেশ আমরা পালন করার চেষ্টা করছি। আপনাদের কিছু বলার থাকলে একাডেমি কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন।’

ওয়াইফাই সংযোগে দেরি হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব শাহিদা খাতুন বলেন, ‘মেলা পরিধি প্রসারিত হওয়ায় নানা টেকনিক্যাল সমস্যা ছিল। এ সবের জন্য ওয়াইফাইর ব্যবস্থা করতে একটু দেরি হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিত এ ব্যবস্থা থাকবে।’

মেলায় রবির প্রচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘রবিকে আমরা শুধু ওয়াইফাই ব্যবস্থা করার সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো ধরনের প্রচারণার কাজ চালালে তা বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএ/এপি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪)