‘গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংস করতেই হরতাল’
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : ক্ষমতাসীন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা হরতালে নাশকতায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, নির্বাচনী দাবি আদায় নয়, নির্বাচিত সরকার উৎখাত ও গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংস করতে ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠেছে বিরোধী দল। তারা পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এই অশুভ চক্রান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
মঙ্গলবার রাতে জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা একথা বলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে চলা অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে এই আলোচনার সূত্রপাত করেন সরকার দলীয় সদস্য তোফায়েল আহমেদ। এই আলোচনায় আরও অংশ নেন আওয়ামী লীগের সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল ও জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু।
পত্রিকায় প্রকাশিত হরতাল সম্পর্কিত বিভিন্ন রিপোর্ট উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সিএনজিতে আগুন দিয়ে যাকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তার স্ত্রীর বক্তব্য স্বামী রাজনীতির সাঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আমার প্রশ্ন যে রাজনীতি করে না, কখনো কর্মসূচিতে যায়নি তাকে কেন এভাবে হত্যা করা হলো? বিরোধী দল হরতাল কর্মসূচি দিয়ে আগের রাতে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো এবং নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয় কেন? সময় এসেছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার। তারা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের পরিণতি কি হবে তার নজির গত কয়েকদিনে দেখিয়েছে। আমরা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবোই।’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘হরতালে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কেউ হরতাল পালন করে, কেউ করে না। কিন্তু সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালানো হরতালে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সংখ্যালঘুরা এদেশে জন্মগ্রহণ করেছে। সবার মত তাদেরও অধিকার আছে। কিন্তু কেন কিসের জন্য তাদের উপর হামলা চালানো হবে?
সুরঞ্জিত বলেন, ‘সব আন্দোলনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ত্যাগ স্বীকার করে। বিরোধী দলীয় নেতা বিজয়া দশমীর দিন হিন্দুদের সামনে মায়া কান্না করেছেন। আবার তার দলই হরতালের সময় সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করছে। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব ও ইয়াহিয়া সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করেছিল। কিন্তু টিকতে পারেনি। ইতিহাস জানে তাদের কি পরিণতি হয়েছিল। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি ডেকে সংখ্যালঘুদের উপর হামলাসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য বিরোধী দলীয় নেতাকে জাতির কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘হরতালের নামে যা হচ্ছে তা গণতান্ত্রিক নয়, ফ্যাসিস্ট। এ অবস্থা চলতে পারে না। জামায়াত-শিবির যা করছে তাকে নৃশংস ছাড়া আর কি বলা যায়? তারা সাধারণ লোকদের ব্যক্তিগত ও শারীরিকভাবে আক্রমণ করছে। তারা যা করছে তার অর্থ হচ্ছে অন্য কোন উপায়ে সরকারের পতন ঘটানো।’
তিনি বলেন, ‘অতি বিপ্লবীর চক্রান্ত হচ্ছে। ককটেল বিস্ফোরণের পাশাপাশি সীতাকুন্ডে একে-৪৭ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অর্থ হলো তারা রীতিমত যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে।’ এদের প্রতিহত করতে সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘খুনের নেশায় উন্মাদ একজনকে ঠেকানোর প্রশ্ন সামনে এসেছে। ১৯৭৫ সালে যারা খুন করেছিল তারা বর্তমানে হরতালের কর্মসূচি দিয়ে খুনের নেশায় মেতে উঠেছে। এলাকার যত মাস্তান আছে তাদেরকে অগ্রিম দেওয়া হচ্ছে। আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে হরতালের সময় হত্যাকাণ্ড, যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা বলেন একপেশে নির্বাচন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই আপনারা কেন বলেন না যে সংবিধানের বাইরে নয়, সংবিধানের ভিতরে নির্বাচন হবে। আপনারা একাত্তরে যেভাবে পরাজিত হয়েছেন তার চেয়ে আরও ভয়াবহভাবে পরাজিত হবেন।’
জাতীয় পার্টির (এ) মো. মুজিবুল হক বলেন, ‘হরতাল দেশের ১৬ কোটি মানুষ চায় না। হরতাল শুনলেই মানুষ ভয় পায়। এই বুঝি আগুন লাগানো হল। হরতাল আজকে একটি ঘৃণ্য বিষয়। সংসদে শুধু আলোচনা কেন, হরতালের বিষয়ে সংসদকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হরতাল বন্ধ করতে হবে। অথবা হরতালে মানুষ মারা গেলে হরতাল আহ্বানকারী দলের শীর্ষ নেতাকে হুকুমের আসামি করতে হবে।’
তারানা হালিম বলেন, হরতালের নামে ছোট ছোট শিশুদের পেট্রল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার কী হৃদয় এতটুকুও কাঁপে না? খালেদা জিয়ার হাত রক্তে রঞ্জিত। বিএনপি-জামায়াত তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেছে যে, তারা ক্ষমতায় আসলে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক সকল মানুষের ঘরে ঘরে বোমা মারবে, কাউকে ছাড়বে না। দেশবাসীকে জেগে উঠে বিএনপি-জামায়াতকে রূখে দিয়ে নাগরিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
(দিরিপোর্ট২৪/আরএইচ/এমসি/জেএম/নভেম্বর ০৬, ২০১৩)