দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : আল্লাহর রাসূল হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর স্ত্রীগণের মধ্যে হজরত আয়েশা (রা.) সম্ভবত সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে রাসূল (সা.)-এর স্ত্রী ও খলিফা আবু বকর (রা.) এর কন্যা। রাসূলের সাথে তার মাত্র ৯ বছরের সংসার জীবন। রাসূলের ওফাতের পর ইসলামের ইতিহাসে তার রয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

হজরত আয়েশা(রা.) এর মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করা হলো:

হজরত আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেন, আমি গর্বের জন্য নয়, বরং বাস্তব কথাই বলছি। আর তা হলো, আল্লাহ তায়ালা এমন কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আমাকে দান করেছেন যা আর কাউকে দান করেননি।

এক : ফেরেশতা রাসূলুল্লাহ (সা.)কে স্বপ্নের মাধ্যমে আমাকে দেখিয়েছেন।

দুই : আমার সাত বছর বয়সে রাসূল(সা.) আমাকে বিয়ে করেছেন।

তিন : মাত্র নয় বছর বয়সে আমি স্বামীগৃহে প্রবেশ করেছি।

চার : আমিই ছিলাম রাসূল (সা.)-এর একমাত্র কুমারী স্ত্রী।

পাঁচ : যখন তিনি আমার বিছানায় থাকতেন তখন ওহি নাজিল হতো।

ছয় : আমি ছিলাম রাসুল(সা.)-এর সর্বাধিক প্রিয় স্ত্রী।

সাত : আমাকে নির্দোষ ঘোষণা করে কোরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে।

আট : জিব্রাইল(আ.)-কে আমি স্বচক্ষে দেখেছি।

নয় : রাসূল (সা.) আমার কোলে মাথা রেখে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

দশ : আমি তার খলিফা ও তার সিদ্দিকের কন্যা।

এগারো : আমার ঘরেই তার কবর দেওয়া হয়েছে।

হযরত আয়েশা (রা.)-এর সিরাতের প্রতি যখন দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়, তখন কেবল সকল মহিলা সাহাবা নয়, বরং অনেক বড় বড় পুরুষ সাহাবিদের তুলনায় তার যে অনন্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় সেগুলো হলো-

* দ্বীনের তাৎপর্য বিষয়ে গভীর জ্ঞান।

* ইজতিহাদির ক্ষমতা ও শক্তি

* আলোচনা ও পর্যালোচনার রীতিপদ্ধতি

* গভীর অন্তর্দৃষ্টি

* প্রয়োজনীয় মতামত প্রকাশের ক্ষমতা

হজরত আয়েশা (রা.) সম্পর্কে কয়েকজন প্রতিথযশা সাহাবায়ে কেরাম, তাবে-তাবেঈন ও মুসলিম স্কলারের কিছু মন্তব্য লক্ষ করা যাক–

হজরত মুসা আশ’আরী (রা.) বলেন, আমরা হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর সাহাবিরা কক্ষনো এমন কোনো কঠিন সমস্যার মুখোমুখি হইনি, যে বিষয়ে আমরা আয়েশা (রা.)-এর নিকট জানতে চেয়েছি এবং সে সম্পর্কে কোনো জ্ঞান আমরা তার কাছে পাইনি।

প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফের (রা.) সুযোগ্য পুত্র আবু সালামা যিনি একজন অতি উচ্চস্তরের তাবেঈ ছিলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাতের জ্ঞান, প্রয়োজনে কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দান, আয়াতের শানেনজুল ও ফরজ বিষয়সমূহে আমি আয়েশা (রা) অপেক্ষা অধিকতর পারদর্শী ও সুচিন্তিত মতামতের অধিকারী আর কাউকে দেখিনি।

হজরত উরউয়া ইবনে যুবায়ের (রা.) বলেন, আমি হালাল, হারাম জ্ঞান, কবিত্ব, চিকিৎসাবিদ্যায় উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) অপেক্ষা অধিক পারদর্শী কাউকে দেখিনি।

প্রখ্যাত তাবেঈ হজরত মাসরুখ (রা.) যিনি হজরত আয়েশা (রা.)-এর তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন, একবার তাকে প্রশ্ন করা হলো- উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) কি ফারায়েজ শাস্ত্র জানতেন? তিনি জবাব দিলেন-সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন, আমি বড় বড় সাহাবীকে তার কাছে ফারায়েজ বিষয়ে প্রশ্ন করতে দেখেছি।

আল্লামা জাহাবি বলেন-তিনি ছিলেন বিশাল জ্ঞানভান্ডার। উম্মতে মুহম্মদীর মধ্যে, সার্বিকভাবে মহিলাদের মধ্যে তার মতো বড় জ্ঞানী ব্যক্তি নেই।

ইলম ও ইজতিহাদ বা জ্ঞানে হজরত আয়েশা (রা.) কেবল মহিলাদের মধ্যেই নন, বরং পুরুষদের মধ্যে বিশেষ স্থান অধিকার করতে সক্ষম হন। কুরআন, সুন্নাহ, ফিকাহ, আহকামবিষয়ক জ্ঞানে তার স্থান ও মর্যাদা এত ঊর্ধ্বে যে উমর (রা.), আলী (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ(রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) প্রমুখের সাথে তার নামটি নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করা যায়।

(দ্যরিপোর্ট/একেএ/এনআই/এম/ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬)