ইবিতে বিজয় দিবসের খাবার নিয়ে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ
ইবি প্রতিনিধি : মহান বিজয় দিবসের খাবার নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংর্ঘষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৬ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গেছে।
আহতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় সাদ্দাম হোসেন হলে খাবার বিতরণকালে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী গ্রুপের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসনের আয়োজনে প্রতিটি হলে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
যোহরের নামাজ শেষে হলের ডাইনিংয়ে খাবার বিতরণ শুরু করে হল প্রশাসন। সাদ্দাম হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে নির্ধারিত টোকেন দিয়ে খাবার বিতরণ শুরু হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার দাসের কর্মী ও সাদ্দাম হোসেন হল শাখার সহ-সভাপতি নওশাদ তার কয়েকজন কর্মী নিয়ে খাবার বিতরণে নিয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল গ্রুপের কর্মী ও সাদ্দাম হল শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর নওশাদের কাছে খাবারের টোকেন চায়। কিন্তু নওশাদ টোকেন ছাড়াই খাবর দাবি করে। এতে নাঈম ও সাগর তাকে টোকেন ছাড়া খাবার দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
এ নিয়ে নওশাদের সাথে নাঈম ও সাগরের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। হলের প্রোভোস্ট প্রফেসর ড. আশরাফুল আলম তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
একপর্যায়ে নওশাদ তাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে বেরিয়ে যায়। পরে নওশাদ হলের বাইরে গিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার দাসের অনুসারী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মূল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক তৌকির মাসুদ, ছাত্রলীগ কর্মী সুমন, সজয়সহ ১০/১৫ জনকে নিয়ে হলে প্রবেশ করে। তাদেরকে প্রবেশ করতে দেখে সাদ্দাম হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাঈম ও সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সাগর ভয়ে তার নেতাকর্মীদের রেখে পালিয়ে যায়।
সেখান অবস্থান নেওয়া সভাপতি গ্রুপের নেতা কর্মীদের ওপর রড, লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা। এতে হলের খাবার নিতে আসা সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের হামলার শিকার হয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সাদ্দাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের মাঝে।
এ হামলায় সভাপতি গ্রুপের কর্মী জসীম, মিজান, নিল, হিমেল ও আশিক আহত হয়। এর মধ্যে জসীম ও মিজান গুরুতর আহত হয়েছে। হামলা শেষে নওশাদ, সুমন ও মাসুদ তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে যায়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান ও ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে আসেন।
সাইফুলের সাথে আসা তার গ্রুপের নেতাকর্মীরা প্রক্টরের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। একপর্যায়ে সভাপতি গ্রুপের কর্মী ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আরিফুল ইসলাম প্রক্টরের ওপর চড়াও হয় এবং প্রক্টরের গায়ে হাত তোলে। তবে ছাত্রলীগের সভাপতির হস্তক্ষেপে পরিবেশ শান্ত হয়।
এদিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছে, বর্তমান কমিটির মেয়াদ একবছর আগে উত্তীর্ণ হয়েছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। বিজয় দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া নিয়েও মুক্তবাংলায় মুখোমুখি অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের প্রতি কোনো আনুগত্য দেখা যায় না কর্মীদের মধ্যে। দলের মধ্যে সবসময় বিশৃঙ্খলা ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মূলত সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনায়।
সংঘর্ষের ব্যাপারে নওশাদ বলেছেন, ‘নাঈম ও সাগর বহিরাগতদের টোকেন ছাড়াই খাবার দিচ্ছিল। আমি সেখানে বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের ওপর চড়াও হয়। পরে আমরা তার প্রতিবাদ করেছি।’
সাদ্দাম হোসেন হলের সভাপতি নাঈম বলেছেন, ‘নওশাদ তার কর্মীদের জন্য টোকেন ছাড়াই খাবার দাবি করে। কিন্তু আমরা তাতে বাধা দিলে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার দাস বলেছেন, ‘এই ঘটনায় আমার কোনো নেতাকর্মী জড়িত নয়। থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘ভুল বোঝাবুঝির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। আমার নেতাকর্মীদের ওপর যারা এই হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিব।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান বলেছেন, ‘ঘটনা শোনা মাত্রই সেখানে উপস্থিত হয়ে উভয়ের মাঝে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করি। বিজয় দিবসের দিনে যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে। সে যেই হোক না কেন, কোন ছাড় পাবে না।’
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/এনআই/ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬)