চিটাগাং রিংরোড প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে ৯২৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দ্বিতীয়বারের মতো ব্যয় বাড়ছে চিটাগাং সিটি আউটার রিংরোড প্রকল্পে। প্রথম সংশোধিত ব্যয় ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা থেকে ৯২৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ হাজার ৪২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
অনুমোদনের সময় প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৮৫৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এছাড়া বাস্তবায়নের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী এবং বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত। দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যের সিংহভাগই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করা, বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, শহরের যানযট হ্রাস করা এবং পর্যটনশিল্পের বিকাশের জন্য চট্টগ্রাম শহরের অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি। এ উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম শহরের যানযট নিরসন করার জন্য প্রয়োজনীয় সড়ক ও সেতুর উন্নয়ন আবশ্যক।
জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) চট্টগ্রাম শহরের অপ্রতুল অবকাঠামোগত অসুবিধাসমূহ চিহ্নিতকরণের জন্য ২০০৬ সালে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে।
এই সমীক্ষায় ট্রাস্ক রোড নেটওয়ার্কের আওতায় দুটি রিংরোড ও ছয়টি রিডায়াল রোড নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম শহর রিং রোডটি নির্মাণ করার জন্য বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যানে ও বিষয়টি উল্লেখ থাকার প্রেক্ষাপটে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। চিটাগাং সিটি আউটার রিংরোডটি মূলত শহর রক্ষাকারী বিদ্যমান উপকূলীয় বাঁধের উপর নির্মিত হবে।
মূল প্রকল্পটি সরকারি ও জাইকার অর্থায়নে মোট ৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বাস্তবায়নের জন্য ২০১১ সালের ২৯ মার্চ একনেকে অনুমোদিত হয়।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দাখিল করা রোড এলাইনমেন্ট এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৮৮ দশমিক ৬৭ একর হতে ১২৬ দশমিক ৩৬ একর জমির মৌজা দরবৃদ্ধি, এনজিও কর্তৃক দাখিলকৃত স্ট্রাকচার ক্ষতিপূরণ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করা হয়। প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৩৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১১ সালের জানুয়ারি হতে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদিত হয়। ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর একনেক অনুবিভাগ হতে অনুমোদনের আদেশ জারি হয়। এ প্রকল্পে রাস্তার অতিরিক্ত দুই লেনের ব্যয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) কর্তৃক নির্বাহের সংস্থান ছিল।
প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় দেখা যায়, রাস্তার চূড়ান্ত এলাইমেন্ট অনুসারে কিছু কিছু অংশে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন আছে, যা ইতোমধ্যেই অনুমোদিত আরডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিজাইন ভেটিং এর সময় বাঁধের ঢাল হতে নতুন করে কিছু জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ রাস্তার মধ্যে চেইনেজ কিলোমিটার শূন্য দশমিক ৪৮ কিলোমিটার, ৪ দশমিক ২০ এবং চেইনেজ কিলোমিটার ৯ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ১ হাজার রাস্তার সমুদ্র সংলগ্ন অংশে প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা প্রণয়নের সময় ওয়েভ ডিফ্লেকটেড ওয়াল প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের সময় অঙ্গটি বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু ওয়েভডিফ্লেকটেড ওয়াল নির্মাণ করা না হলে রোয়ানুর মত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সমুদ্র সংলগ্ন উপকূলীয় বাঁধ অংশে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়ে যায়। এছাড়া সাম্প্রতিককালে সংগঠিত জলোচ্ছ্বাস ‘রোয়ানুর’ মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বিবেচনা করে বাঁধের স্থায়িত্বের জন্য প্রকল্পের রাস্তা চেইনেজ কিলোমিটার ৫ কিলোমিটার হতে ১৫ দশমিক ২০ পর্যন্ত বাঁধের ঢাল বরাবরে সিসি ব্লক দিয়ে পিচিং করা প্রয়োজন। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রকল্পের আওতায় রাস্তার মধ্যে চেইনেজ কিলোমিটার শূন্য দশমিক ৪৮ কিলোমিটার ৪ দশমিক ২০ এবং চেইনেজ কিলোমিটার ৯ দশমিক ৫০ কিলোমিটার ১ হাজার রাস্তার মধ্যে সমুদ্র সংলগ্ন অংশে ওয়েভ ডিফ্লেকটেড ওয়াল দেওয়া হবে। প্রকল্পের রাস্তার চেইনেজ কিলোমিটার ৫ কিলোমিটার ১৫ দশমিক ২০ পর্যন্ত বাঁধের মোট ১০ দশমিক ২০ কিলোমিটার ঢাল বরাবর সিসি ব্লক পিচিং কাজ প্রকল্পের সংশোধন প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসকল কাজ অন্তর্ভুক্ত করে এবং প্রথম সংশোধিত অনুমোদিত প্রকল্পে সড়কটি ২ লেন হতে ৪ লেনে উন্নীতকরণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অর্থায়নের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় তা সরকারি অর্থায়ন প্রস্তাবে ২ হাজার ৫০৭ কোটি ৮০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয়বার সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর প্রকল্পের উপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য খোরশেদ আলম চৌধুরী পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় অতি প্রয়োজনীয় কিছু নতুন আইটেম সংযোজন করা হয়, যা বাস্তবায়ন করা না হলে প্রকল্পটির সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদিত না হলে প্রকল্প হতে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে না। তাই প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রকল্পের প্রধান প্রধান কার্যক্রমগুলো হচ্ছে পুনর্বাসন স্থান উন্নয়ন, ৪৫ দশমিক ৯৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ, স্ট্রাকচার ক্ষতিপূরণ, ৩টি ইন্টারচেইঞ্জ সেতু নির্মাণ, ৯টি রাউন্ড অ্যাবাউট নির্মাণ, ওয়েভ ডিফ্লেকটেড ওয়াল নির্মাণ, ইলেকট্রিকপোল, টিএন্ডটি পোল স্থানান্তর, গ্যাসলাইন স্থানান্তর, এলইডি লাইন স্থাপন, সিসি ব্লক স্থাপন। এছাড়া যানবাহন ক্রয়, কম্পিউটার ও কম্পিউটার সরঞ্জামাদি ক্রয়, বিভিন্ন পয়েন্টে বেরিয়ার, গার্ড রেল, সাই, সিগন্যাল, লাইন মার্কিং এবং পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সৌন্দর্য বর্ধন ইত্যাদি কাজসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এপি/ডিসেম্বর ২১, ২০১৬)