২১ ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আল-কায়েদার প্রকাশিত অডিওবার্তাকে মাথায় রেখেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারির নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বুধবার বেলা ১২টায় ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০১৪ উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলে ধরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
বেনজীর আহমেদ বলেন, আল-কায়েদা ও জঙ্গি সমস্যা একটি বিশ্ব সমস্যা। বাংলাদেশের মাটি তাদের জন্য উপযুক্ত নয়। তারপরও আমরা এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন এজেন্সি এ বিষয়ে কাজ করছে।
আল-কায়েদা নেতার অডিও ইন্টারনেটে প্রচার করার অভিযোগে র্যাবের হাতে গ্রেফতার যুবকের প্রচারণা সম্পর্কে তিনি বলেন, পুলিশ আগেই বিষয়টি অবহিত ছিল। তবে বাংলাদেশে আল-কায়েদার নেটওয়ার্ক কেমন অবস্থায় আছে সেটার বিষয়ে তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আমার হাতে এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। তাই মন্তব্য করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ‘অতীতেও এ রকম নানা সমস্যা দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবেলা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও তাই করা হবে। এই দেশকে জঙ্গিদের ব্যবহারের ক্ষেত্র হতে দেব না। আমরা মনে করি না, বাংলাদেশের মাটি জঙ্গি অথবা আল-কায়েদার ব্যবহার উপযোগী। তবে সকল ধরনের হুমকি মোকাবেলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।’
ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের অনেক সুবিধা রয়েছে। কিছু অসুবিধাও থাকবে। তাই বলে আমরা এই সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে না। আমি কখনো সমস্যা সৃষ্টির কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করার পক্ষে নই। আল-কায়েদার সঙ্গে বাংলাদেশের ইসলামী দলের সংম্পৃক্ততা আছে কি না সে বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে।’
তিনি নগরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, মধ্যরাতে ভিআইপিদের শ্রদ্ধা ও রাষ্ট্রীয় প্রটোকল শেষ করতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে। এই সময়টুকু সবাইকে ধৈর্য্য ধরতে হবে। এরপরই সাধারণ মানুষের জন্য শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নিমন্ত্রণে দেশের খ্যাতনামা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শ্রদ্ধাভাজনরা আসেন। তারা আগে থেকেই খেলার মাঠে অপেক্ষা করতে থাকেন। ভিআইপিদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষ হতে না হতেই তারা দৌড়ে ও হুড়োহুড়ি করে শহীদ মিনারে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় কিছুটা বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ের দিকে তাদের খেয়াল রাখা উচিৎ। আমরা মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি পুলিশি ব্যবস্থা প্রয়োগ করে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে চাই না। যার যার দায়িত্ব থেকে শহীদদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবেন।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় যানচলাচল নিয়ন্ত্রণসহ বহিরাগতদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কগুলোতে আল্পনা আঁকার জন্য বুধবার থেকেই এসব সড়কে কোন গাড়ি চলাচল করবে না। ঢাবির স্টিকারযুক্ত ছাড়া কোন গাড়ি ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এই কড়াকড়ি আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টা পর্যন্ত চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাফিক বিভাগের ডিসি (ঢাকা দক্ষিণ) খান মো. রেজওয়ান, ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে প্রবেশ ও বাহিরের পথ এবং গাড়ি পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থানসহ এলাকায় পুলিশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড উপস্থাপণ করেন।
তিনি জানান, শহীদ মিনারে প্রবেশে একটি মাত্র রুট ব্যবহার করতে পারবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতে আসা মানুষ। তা হলো পলাশী হয়ে জগন্নাথ হল ক্রসিং হয়ে শহীদ মিনার। পলাশী ক্রসিং ছাড়া অন্য কোন সড়ক দিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ করা যাবে না। ভিআইপিদের জন্য ঢাবির খেলার মাঠে পার্কিং করার ব্যবস্থা থাকবে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়ার রাস্তা
(ক) আজিমপুর গোরস্থান থেকে যারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেতে চান তারা আজিমপুর গোরস্থানের মূল গেইট থেকে (গোরস্থানের দক্ষিণ পার্শ্বে) বের হয়ে আজিমপুর সড়ক, আজিমপুর বেবী আইসক্রিম মোড়, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যাবেন।
(খ) বকশী বাজার, চকবাজার, উর্দুরোড, ঢাকেশ্বরী সড়ক, নাজিম উদ্দিন সড়ক, বাবুপুরা সড়ক এলাকার জনসাধারণ যারা গোরস্থানে না গিয়ে সরাসরি শহীদ মিনারে যেতে চান তারা পুরাতন রেলওয়ে হাসপাতাল সড়ক, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।
(গ) আব্দুল গনি সড়ক, তোপখানা সড়ক, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী সরণী (পার্ক এভিনিউ) এলাকার যে সমস্ত জনসাধারণ গোরস্থানে না গিয়ে শহীদ মিনারে যেতে চান তারা হাইকোর্ট, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, টিএসসির মোড়, নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।
(ঘ) যেসব ছাত্র-ছাত্রী ও জনসাধারণ রোকেয়া হল, সামসুন্নাহার হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় এর কলাভবন এলাকা হতে সরাসরি শহীদ মিনারে যেতে চান তারা নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি, পলাশী ক্রসিং, এসএম হল এবং জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।
(দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/জেএম/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪)