দিরিপোর্ট২৪ ডেস্ক : কথাশিল্পী শাহেদ আলী ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান গদ্য লেখক। তার কালজয়ী ছোটগল্প ‘জিবরাইলের ডানা’ পড়েননি বা এর নাম জানেন না এমন সংস্কৃতিমনা বাঙালি কমই আছেন। তিনি একজন ভাষাসৈনিক। এছাড়া ইসলামী চিন্তাবিদ, সাংবাদিক, অনুবাদক, গবেষক হিসেবেও পরিচিত।

শাহেদ আলীর জন্ম ১৯২৫ সালের ২৪ মে সিলেটের সুনামগঞ্জের মাহমুদপুরে। তিনি ১৯৪৩ সালে সুনামগঞ্জ থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। তার উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক সিলেট এমসি কলেজ থেকে যথাক্রমে ১৯৪৫ ও ১৯৪৭ সালে। ১৯৫০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেন।

তিনি ১৯৫১ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত মিরপুর বাংলা কলেজ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম সিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৪ সালে খেলাফতে রব্বানী পার্টির হয়ে সুনামগঞ্জ থেকে আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সচিব ছিলেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৪৪-৪৬ সালে মাসিক প্রভাতি এবং ১৯৪৮-৫০ সালে সাপ্তাহিক সৈনিক সম্পাদনা করেন। ১৯৫৫ সালে দৈনিক বুনিয়াদ সম্পাদনা করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শিশু মাসিক সবুজ পাতার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন ১৯৬৩ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত। ১৯৫৬ সালে দৈনিক মিল্লাতের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে বাংলা একাডেমী পত্রিকা সম্পাদনা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ইসলামী বিশ্বকোষের সম্পাদনা বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন। ১৯৪৮-৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ও দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের মৃত্যুর (১ নভেম্বর ১৯৯৯) পর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

অষ্টম শ্রেণীতে পড়াকালে তার ছোট গল্প ‘অশ্রু’ প্রকাশিত হয় মাসিক ‘সাওগাতে’। তার প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ছয়টি। প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ গল্পগ্রন্থ ’জিবারাইলের ডানা’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৩ সালে। ‘জিবরাইলের ডানা' গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে ভাষা আন্দোলনের মুখপত্র ‘সৈনিক' পত্রিকায়। গল্পটি হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি ও রাশিয়ান ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এই গল্পটি নিয়ে ভারতের পাঁচজন নির্মাতা চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চেয়ে ছিলেন। গল্পটি এক সময় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

অন্যান্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে একই সমতলে (১৯৬৩), শা’নযর (১৯৮৫), অতীত রাতের কাহিনী (১৯৮৬), অমর কাহিনী (১৯৮৭) এবং নতুন জমিনদার (১৯৯২)। তার একমাত্র উপন্যাস ‘হৃদয় নদী’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে।

অনুদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে মক্কার পথ (মূল: মুহাম্মাদ আসাদ), ইসলামে রাষ্ট্র ও সরকার (মূল: মুহাম্মাদ আসাদ), আধুনিক বিজ্ঞান ও আধুনিক মানুষ (মূল: কে বি এইচ কোনান্ট) ও ইতিবৃত্ত (হিরোডোটাস)। ধর্ম ও দর্শন নিয়ে রচিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুক্তির পথ, বুদ্ধির ফসল আত্মার আশিস এবং ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা।

শাহেদ আলী ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমী পুরষ্কার লাভ করেন। এছাড়া উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতির মধ্যে রয়েছে ভাষা আন্দোলন পদক (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৮৯), ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৮৬), ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯৭), জাসাস স্বর্ণপদক (মরণোত্তর ২০০০) এবং তমদ্দুন মজলিস মাতৃভাষা পদক (২০০০)।

(দিরিপোর্ট২৪/ডব্লিউএস/নভেম্বর ০৬, ২০১৩)