দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক কম বলে দাবি করেছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

রাজধানীর ইস্কাটন রোডে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের মৃত্যুর হার আমাদের দেশের সাধারণ গড় মৃত্যুর হারের চেয়েও কম। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি এক কোটি জনসংখ্যায় মৃত্যু হয় ৫৬ হাজার ৭০০ জন। অন্যদিকে ২০১৩ সালে প্রবাসে অবস্থানরত ৮৭ লাখ ১৭ হাজার ২ জনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৭৬ জন, যা বাংলাদেশে মৃত্যু হওয়া জনসংখ্যার ১৮ ভাগের একভাগ।

মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩ সালে বিদেশ থেকে মোট তিন হাজার ৭৬ জন শ্রমিকের লাশ এসেছে। এর মধ্যে ২৯.৫৭ শতাংশই অস্বাভাবিক মৃত্যু। বাকি ৭০.৪৩ শতাংশ স্বাভাবিক মৃত্যু।’

অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করে শ্রমমন্ত্রী বলেন, ‘দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে যাওয়ার পর কর্মীরা অস্বাভাবিক অভিবাসন ব্যয়ের অর্থ উত্তোলনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। কর্মক্ষেত্রে তারা অমানুষিক পরিশ্রম করেন। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য অনেকেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে বসবাস করাসহ অধিকমাত্রায় ঝুঁকিগ্রহণ করেন। এতে তাদের মধ্যে এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর এটি একটি বড় কারণ।’

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করেই আমরা অভিবাসন ব্যয় কমানোর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দালালদের খপ্পরে যাতে পড়তে না হয় এ জন্য এখন ‘জি টু জি’ পদ্ধতিতে লোক পাঠানো হচ্ছে। মালয়েশিয়ার মাত্র ২৭ হাজার টাকায় কর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৌদি আরবে ১৭ হাজার ৪০০ টাকায় এবং জর্ডানে বিনা খরচে নারী শ্রমিক এবং অন্যান্য দেশে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায় নারী শ্রমিক প্রেরণ করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আকামা (কাজ) পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এতে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলো কী না সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা সরাসরি বাজার উন্মুক্তের ঘোষণা দেয়নি। পেশা পরিবর্তনের সুযোগ দিয়েছে। তার মানে অন্যান্য দেশে যেভাবে চাইলেই পেশা পরিবর্তন করতে পারে, সৌদিতেও এ সুযোগ শ্রমিকরা পাচ্ছেন। এটি সৌদির বাজার উন্মুক্তের পূর্বলক্ষণ বলে মনে করা হচ্ছে। তারা যদি আমাদের কাছে শ্রমিকের ডিমান্ড চায় তাহলে আমরা শ্রমিক পাঠাতে প্রস্তুত। আমাদের দেশের লোকজন (মন্ত্রণালয়-দূতাবাস কর্মকর্তারা) কত তাড়াতাড়ি ডিমান্ড আনতে পারেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী গত ২০০৫ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিদেশে থেকে বাংলাদেশি শ্রমিকের লাশ আসার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সংবাদ সম্মেলনে। এতে দেখা যায়, ২০০৫ সালে এক হাজার ৪৮ জন, ২০০৬ সালে এক হাজার ৪০২ জন, ২০০৭ সালে এক হাজার ৬৭৩ জন, ২০০৮ সালে দুই হাজার ৯৮ জন, ২০০৯ সালে দুই হাজার ৩১৫ জন, ২০১০ সালে দুই হাজার ৫৬০ জন, ২০১১ সালে দুই হাজার ৫৮৫ জন, ২০১২ সালে দুই হাজার ৮৭৮ জন এবং ২০১৩ সালে তিন হাজার ৭৬ জন শ্রমিকের লাশ বিদেশ থেকে এসেছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. শওকত হোসেন, জনশক্তি রপ্তানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক বেগম শামসুর নাহারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

(দ্য রিপার্ট/কেএ/একে/আরকে/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪)