অমানিশা ও রক্তজবা
ছড়াকার ও গদ্য লেখক সাইফুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে দৈনিক মানবকণ্ঠের মফস্বল সম্পাদক। লিখছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার প্রথম প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থ প্রগতি প্রকাশনের ‘টিক্ টিক্ টিক্ টিক্’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। এবারের বইমেলায় এসেছে তার প্রথম উপন্যাস ‘অমানিশা ও রক্তজবা।’ বই ও নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হোসেন শহীদ মজনু
এবার মেলায় কী কী বই আসছে? কোন প্রকাশনী বের করছে?
এ মেলায় আমার উপন্যাস ‘অমানিশা ও রক্তজবা’ বের হয়েছে। প্রকাশ করেছে অঙ্কুর প্রকাশনী।
উপন্যাসটি সম্পর্কে বলুন।
ষোড়শ শতাব্দীর ঐতিহাসিক পটভূমিতে রচিত ‘অমানিশা ও রক্তজবা।’ পাঠান রাজত্বের শেষ পর্যায়ে মোঘলদের উত্থানে দেশীয় ক্ষমতার পালাবদলের সময়কাল সেটা। চলনবিল অঞ্চলে ঠাকুর বেণী রায় স্ত্রী হরণের প্রতিশোধ নিতে গড়ে তোলে একটি বাহিনী। পরিণত হয় শক্তিতে। আর সে শক্তির দ্বারস্থ হয় মোঘল সেনাপতি রাজা মানসিংহ। তিনি ঠাকুর বেণী রায়ের কাছে পাঠিয়ে দেন তার ছোট ভাই রাজা ভানুসিংহকে। দুই জনের সমঝোতা হয়। সে সমঝোতার ভিত্তিতে জায়গিরদারি পান ঠাকুর বেণী রায়ের দুই সাগরেদ যুগলকিশোর রায় ও চণ্ডীপ্রসাদ রায়। প্রতিষ্ঠা পায় শেরপুরের [বগুড়া] সান্যাল এবং পোতাজিয়ার [সিরাজগঞ্জ] রায় পরিবার।
প্রকাশনার কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা থাকলে বলুন।
অঙ্কুর প্রকাশনী ২০০৩ সালে আমার ছড়ার বই ‘বোকা ছেলে ও সাত ভূত’ বের করে, তখন থেকেই ওই প্রকাশনীর সঙ্গে আমার যোগাযোগ। তাই কোনো সমস্যা হয়নি।
বইকে কীভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বলে মনে করেন।
বইয়ের বাজারে অঙ্কুর প্রকাশনীর একটা বড় সুনাম আছে, সেই সঙ্গে যোগাযোগও রয়েছে সারাদেশে। তাই বই প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া কোনো সমস্যা নয় বলেই মনে করছি। আমি মনে করি প্রান্তিক পর্যায়ে বই পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রকাশকের পাশাপাশি সরকারেরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
বইমেলার স্থান সম্প্রসারণের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন।
পাঠক, লেখক, প্রকাশকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বই মেলার স্থান সম্প্রসারণ। তাদের দাবি পূরণ হয়েছে। তবে পয়ঃনিষ্কাশন ও ভালো রেস্টুরেন্ট থাকলে আরও ভালো হতো। সবাই ভালো আড্ডার জায়গা পেত। তবু যা হয়েছে, আশা করা যায় সামনে আরও ভালো পরিবেশ হবে।
কেন লেখেন।
আমার বেড়ে ওঠা মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতির মধ্য দিয়ে, দীর্ঘদিন সক্রিয় রাজনীতি করেছি। মিছিলে স্লোগানের ছন্দে ছড়ার প্রতি আকর্ষণ বাড়ে এবং ছড়া লিখতে শুরু করি। এখনও লেখালেখি করি প্রধানত রাজনৈতিক কারণেই। যতদিন বেঁচে থাকব রাজনৈতিক কারণেই লিখব। তবে সে লেখা স্লোগানধর্মী হবে না কখনই।
লেখালেখির ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী।
এখন একটা উপন্যাস লেখার কাজ করছি, আপাতত নাম ‘অশ্বারোহী।’ এ দেশের ইতিহাসে একটি বাঁকের নাম ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি। তাকে নিয়েই লেখা শুরু করেছি উপন্যাসটি। এমন আরও দু’তিনটি ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখব, তারপর বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উপন্যাস লেখার ইচ্ছে আছে।
আপনার পেশা সাংবাদিকতা। আপনি কী মনে করেন সাংবাদিকতা লেখালেখির ক্ষতি করে অথবা সাংবাদিকতায় থাকলে লেখালেখিতে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়?
নিউজের টেনশন থাকে বলে অনেকেই মনে করেন সাংবাদিকতা লেখার জন্য বাধা, কিন্তু আমার কাছে তা মনে হয় না। বাসায় সময় বের করে লিখি। আমার লেখার কাজে সবচেয়ে বড় সহযোগিতা করেন মফস্বল সাংবাদিকরা। এখন যে ইতিহাস নিয়ে পড়ি বা লিখি তার সঠিকতা যাচাইয়ে তারা সহায়তা করেন। সাংবাদিকতা না করলে এ সহায়তা পেতাম না। যেমন ‘ঘোড়ামারা নদী’টি আমি তাদের চোখ দিয়েই দেখেছি। এটা পঞ্চগড় জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। তাই আমার লেখালেখিতে সাংবাদিকতা সহায়কই।