চট্টগ্রাম অফিস : লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা। প্রথমবারের মতো আয়োজিত আঞ্চলিক পর্যায়ের ৩ দিন ব্যাপী ইজতেমায় শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) ছিল দ্বিতীয় দিন। এদিন জুমার নামাজে কম করেও ৮-১০ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটেছে বলে দাবি করেছেন ইজতেমার আয়োজকরা।

ঢাকার টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমায় স্থান সংকুলন না হওয়ায় আঞ্চলিক পর্যায়ে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক কমিটি। সেই মোতাবেক বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) থেকে হাটহাজারী উপজেলায় শুরু হয়েছে ৩ দিনব্যাপী চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক বিশ্ব ইজতেমা।

শুক্রবার ফজরের নামাজের পরে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ ইজতেমার দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম। সকাল থেকে বিভিন্ন বক্তার বয়ানের পর লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এক সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর মুসল্লিদের মধ্যে কেউ বিশাল শামিয়ানার ভেতর বসে বয়ান শুনেছেন, আবার কেউ জিকিরে মুশগুল ছিলেন। অনেকে মাঠের পাশে দুপুরের খাবার রান্নার করে ব্যস্ত ছিলেন। সব কাজই চলছে অত্যন্ত শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে।

ইজতেমায় ৩ দিনের জন্য জেলার সাতকানিয়া থেকে আসা বৃদ্ধ জেবল হোসেন বলেছেন, ‘বেশি দিন বাঁচবো না। এ বয়সে বিশাল এ ধর্মীয় কাজে অংশ নিতে পেরে মনে শান্তি পাচ্ছি। রাতের বেলায় শীতে কিছু কষ্ট হলেও লাখ লাখ মানুষের সাথে বয়ান শুনে সময় পার করেছি।’

চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ ইজতেমায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও ভারত, চীন, কাতার, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, জর্ডান, মিশর, কুয়েত ও দুবাইসহ বিভিন্ন দেশের শতাধিক বিদেশি মেহমানও ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্যরা।

শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে আখেরী মোনাজাত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ আগমন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ইজতেমা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মাওলানা মুফতি জসিম জানিয়েছেন, আজ (শুক্রবার) ফজরের নামাজের পর পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের মাওলানা রিজোয়ান আমবয়ান শুরু করেন। এর পর মুফতি শাহেদ ওই মাওলানার উর্দুতে করা আমবয়ান বাংলাতে তরজমা করেছেন। এ বয়ান ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে। এরপর শুরু হয় মুসল্লিদের মধ্যে তালিম। এ সময় প্রতিটি গ্রুপে ১০-২৫ জন করে তালিমে অংশ নেন। এভাবে জুমা, আছর, মাগরিব ও এশার নাজের পর তাবলিগ জামাতের মুরিব্বরা বয়ান করেন। আগামীকাল আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত বিশিষ্ট আলেম ও তাবলিগ জামাতের শীর্ষ স্থানীয় মুরব্বিরা ঈমান, আমল, আখলাক, ইহকাল ও পরকালসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে বয়ান করবেন।’

এদিকে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টহল অব্যাহত রেখেছেন।

অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইজতেমার নিরাপত্তায় পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করি, শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে এ ইজতেমা।

(দ্য রিপোর্ট/এস/জেডটি/ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬)