যশোর অফিস : বহুল আলোচিত চাপাতলা মালোপাড়াসহ যশোরের অভয়নগর উপজেলায় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ভোটকেন্দ্র ঘুরে নারী ভোটারদের উপস্থিতি পুরুষদের তুলনায় বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

বুধবার বেলা ১২টায় উপজেলার রাজঘাট জাফরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোটারবেশে ঢুকে পড়ে শ’খানেক লোক। তারা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারতে উদ্যত হলে প্রিজাইডিং অফিসার আশিস কুমার নন্দী কর্তব্যরত পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। পুলিশ দুই রাউন্ড গুলি ছুড়লে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

এর আগে, তারা জাফরপুর বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর তিনটি টেন্ট ভাংচুর করে। পরে ওই দুর্বৃত্তরা পাশের গাজীপুর কেন্দ্রে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় বলে এলাকাবাসী জানান।

ব্যালট লুটের চেষ্টার ঘটনা জানতে পেরে অল্প সময়ের মধ্যে জাফরপুর কেন্দ্রে উপস্থিত হন পুলিশের খুলনা বিভাগীয় ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান, যশোর জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম সরফরাজসহ সেনা, বিজিবি ও র‌্যাব কর্মকর্তা ও সদস্যরা।ডিআইজি মনিরুজ্জামান কেন্দ্রটিতে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যে কোনো মূল্যে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজুর রহমান দুর্বৃত্তদের মোকাবেলায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে দুই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে নির্দেশ দেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম সরফরাজ বলেন, দুর্বৃত্তরা সংখ্যায় শ’খানে হলেও দ্রুতই তাদের হটিয়ে দেওয়া হয়।

প্রিজাইডিং অফিসার আশিস কুমার নন্দী দুই রাউন্ড গুলি চালানোর কথা স্বীকার করেন।

এর আগে, সকালে চাপাতলা মালোপাড়ার বাসিন্দাদের কেন্দ্রে গিয়ে নির্ভয়ে ভোট দিতে দেখা যায়। চাপাতলা চেঙ্গুটিয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তিমিরবরণ সরকার এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

ওই কেন্দ্রের ভোটার মনীন্দ্রনাথ জানান, নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই।

উল্লেখ্য, গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিন চাপাতলা মালোপাড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনা দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

চাপাতলা চেঙ্গুটিয়া কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার সকাল ৯টার সময় কেন্দ্রে বসে পরিচয়পত্রে নিজের নাম লিখছিলেন। কার্ডে কোনো ছবিও ছিল না। এটি অনিয়ম কিনা জানতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এএনএম মঈনুল ইসলাম এ ব্যাপারে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।

সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত মেহনাজের কাছে একই প্রশ্ন করা হলে তিনি সরাসরি জবাব না দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখছি।’

উপজেলার নওয়াপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রেমবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আল হেলাল ইসলামী একাডেমি, বাগদাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পায়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বুইকরা আলহেরা ইসলামী একাডেমিসহ বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের চিত্র দেখা গেছে। দু-একটি কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থকদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। প্রতিটি কেন্দ্রে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

ভোটগ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রবিন অধিকারী ব্যাচা বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ নেতা ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আবদুল ওহাবের লোকজন সিংগাড়িসহ কয়েকটি কেন্দ্র দখল করে নিয়েছেন বলে তার অভিযোগ।

বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নূরুল হক মোল্যা বাঘা বলেন, রাজঘাটে দুটি কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে তার প্রতিদ্বন্দ্বী রবিন অধিকারীর সমর্থকরা। এ ছাড়া ভোটের পরিবেশ ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ।

যশোরের পুলিশ সুপার জয়দেবকুমার ভদ্র এবং দায়িত্বরত বিজিবির ব্যাটালিয়ন কমান্ডার লে. কর্নেল মতিউর রহমান নির্বাচনের সামগ্রিক পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/একে/এমএআর/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪)