দিনাজপুর প্রতিনিধি : খানসামা উপজেলা সদরসহ বানগাঁও, বিষ্ণুপুর, জাহাঙ্গীরপুর, গোবিন্দপুর, বেলপুকুর গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য। পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে এখন পুরুষেরা রাতের বেলায় বাড়িতে থাকতে পারছেন না। দিনের বেলায় হাতেগোনা কয়েকজন পুরুষকে দেখা গেলেও রাতে সে সংখ্যা নেমে আসে শূন্যের কোটায়। তবে কোন কোন গ্রামে বয়স্ক ও বৃদ্ধদের দেখা গেলেও তা সামান্য।

খানসামা ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করণের দাবিতে ‘খানসামা ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণ বাস্তবায়ন কমিটি’র ডাকা হরতাল চলাকালে জনতা-পুলিশ সংর্ঘষের ঘটনায় ৭২৮ জনকে আসামি করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। রবিবারের (৮ জানুয়ারি) হরতালের পর পুলিশের মামলার ভয়ে এখন খানসামা সদরসহ ৫ গ্রামের পুরুষ সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) খানসামা ডিগ্রী কলেজ জাতীয়করণের দাবিতে হরতাল চলাচালে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের হামলা, খানসামা বাজার সংলগ্ন ৫০-৬০টি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, শিশু ও মহিলা নির্যাতনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি এডভোকেট মেহেরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বাদল এক যুক্ত বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি এবং মামলা প্রত্যাহার করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।

বানগাঁও গ্রামের রুবেল ইসলাম বলেন, আমি সারাদিন ভ্যান চালাই কিন্তু রবিবার থেকে আগের মত লোক এখন আর ভ্যানে উঠে না আর গ্রামে রাতে থাকতে পারছে না।

খানসামা সদরের মুদিখানা দোকানদার আব্দুল করিম বলেন, রবিবার থেকে দোকানে কোনো কাস্টমার পাচ্ছি না। রাতের বেলা ঘুমাতে গেলে ভয় লাগে কখন এসে ধরে নিয়ে যায়।

সদরের বানিয়া পাড়ার ঝোড়না পোদ্দার বলেন, রবিবার দুপুর বেলা ভাত রান্না করতেছিলাম। তখন ছেলেরা ঘরে ছিলো। সে সময় পুলিশ বাহিরের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে বড় ছেলেকে মারধর করতে থাকে। আমি আর আমার স্বামী আটকাতে গেলে আমাদেরকেও মারধর করে পুলিশ। আমার কোমরে ব্যথা পাওয়ায় এখন হাঁটা-চলা করতে অসুবিধা হয়।

আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের খানসামা সদরের ওয়ার্ডের মেম্বার আনিছুর রহমান হেলাল বলেন, এলাকার পুরুষরা গ্রেফতার আতঙ্কে কেউ বাড়িতে থাকে না। মিছিল-মিটিংয়ে ছিলাম না। অথচ একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও আমার নামে মামলা হয়েছে। গ্রেফতারের ভয়ে দিনমজুররাও কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ স ম আতাউর রহমান বলেন, এখানকার মানুষ গ্রেফতার আতঙ্কে আছে। বেশিরভাগ যুবক গ্রেফতারের ভয়ে বাড়িতে নেই। আতঙ্কে অনেক দোকানপাটও বন্ধ আছে।

উল্লেখ্য, খানসামা ডিগ্রী কলেজকে জাতীয়করণের দাবিতে ডাকা রবিবার অর্ধদিবস হরতাল চলাকালে সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৩ রাউন্ড টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। এ ঘটনায় রবিবার গভীর রাতে পুলিশ খানসামা থানায় দুটি মামলা দায়ের করে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এনআই/জানুয়ারি ১০, ২০১৭)