ওবায়দুল ইসলাম চঞ্চল, দ্য রিপোর্ট : ফেইসবুকে অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়া ছেলে বর্ণ রায়ের স্ট্যাটাস, ‘আমার বাবার জন্য সবাই দোয়া করবেন।‘ এ কথা বলেই সারামুখে অন্ধকার মাধুরী রায়ের। অবায়বে ফুটে ওঠেছে রাজ্যের কষ্ট। কে ওই মাধুরী রায়; তিনি সাবেক ফুটবলার, হালের সংগঠক বাদল রায়ের সহধর্মীনী! খুব সাদা-মাটা সোজা সাপটা স্বভাবের মাধুরী পরক্ষণেই ছলছল চোখে তাকিয়ে থেকেছেন ঘুমন্ত বাদল রায়ের দিকে।

অসুস্থ বাদল রায়কে ১১ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। কাঁচের দেয়াল ঘেরা সিসিইউর কমনরুমে একটি বিশেষায়িত বিছানায় দেখতে দেখতে ইতিমধ্যে কেটে গেছে ৯ দিন। অথচ এখনও তাকে দেখতে যেতে পারেননি মাঠের সঙ্গী বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন কিংবা ক্রীড়া উপমন্ত্রী ও বাফুফের সহ-সভাপতি আরিফ খান জয়। তবে বাদল রায়ের হিতাকাঙ্খী সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওয়াবদুল কাদের ঠিকই ছুটে গিয়েছেন সিসিইউতে। ছুটে এসেছেন আরও অনেকেই।

তবে কে এসেছেন; আসেননি; তা নিয়ে আক্ষেপ নেই বাদল রায়ের সহধর্মিনী মাধুরী রায়ের। বাফুফে সভাপতি ও সহ-সভাপতির নাম বলতেই ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে শুধু বলছেন, ‘হয়ত, তাদের অনেক কাজ। তাই সময় পাননি।’ কথাগুলো বলতে বলতে একটু অন্যমনষ্কও হয়ে গেছেন মাধুরী। তাতেই প্রকাশ পেয়েছে তার ভেতরের কষ্টের। বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়; বাদল রায়ের অনেক কাছের মানুষ হয়েও তাকে দেখতে যেতে পারেননি। যা অনেকেই দুঃখজনক মানছেন। তবে তাকে একনজর দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন ক্রীড়া সংগঠক, সাংবাদিক ও ভক্তরা। যেমন বুধবার তাকে দেখতে ছুটে এসেছিলেন জাতীয় দল ও মোহামেডানের উইঙ্গার জাহিদ হোসেন। সদালাপী বাদল রায়কে দেখতে এসে জানিয়েছেন, ‘দাদার খবর শুনেই আর থাকতে পারিনি। ছুটে এসেছি।’ বাদল শুধু জাতীয় দলের ফুটবলারই নয়; তিনি একাধারে বাফুফের সহ-সভাপতি-বিওএ উপ-মহাসচিবও। সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ক্রীড়াঙ্গনের নেতা হিসেবেও তাকে গণ্য করা হয়।

পুরনো ঘটনার বর্ণনায় মাধুরী রায় জানিয়েছেন, ১১ ফেব্রুয়ারি আকষ্মিক বুকে ব্যথা অনুভব করায় বাদল রায় শরণাপন্ন হয়েছেন বাফুফের চিকিৎসক ইমরানের। তার পরামর্শেই বাদল রায় ডা. সজল ব্যানার্জীর হাত ধরে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সিসিইউতে ভর্তি হয়েছেন।

বাদল রায়ের অবস্থা এখনও শতভাগ ঝুকিমুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন সজল ব্যানার্জি। তবে এখনই কাচির নিচে তাকে নেয়ার কথা ভাবছেন চিকিৎসকরা। তার চিকিৎসকরা এখনও ওষুধেই থাকতে চাচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্টও হাতে পেয়েছেন চিকিৎকসরা। তা নিয়ে দুই-এক দিনের মধ্যে বোর্ড বসাবেন। সেখানেই ঠিক করা হবে বাদল রায়ের ভাগ্য।

আগে থেকেই শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছিল বাদল রায়ের। এ বিষয়ে মাধুরী রায় বলেছেন, ‘আগে রমনা পার্কে দুইবার চক্কর দিতে পারত। এখন একবার চক্কর দিয়ে হাপিয়ে ওঠে।’ তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘ওইদিন গোসল করার পরও ভালো লাগছে না বলেছে। খেতেও চাননি। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতেই তার কষ্ট হচ্ছিল। এটা দেখেই আমারা ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছি।’ বলেছেন আরও, ‘ডাক্তাররা বলছে তার কিছু হয়নি। কিন্তু যখন তাকে সিসিইউতে ভর্তি করা হচ্ছে এটা শুনেছি, তখন আমার পায়ের নিচে মাটি ছিল না। খুব ভয় পেয়েছিলাম।’

বাদল রায়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়ে বৃষ্টি অস্ট্রেলিয়াতে অনার্স পড়ছেন। প্রতি মুহূর্তেই বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিছুদিন আগে স্কাইপিতে বাবার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সও করেছেন। আর ডাক্তারের সঙ্গে তো তারই বেশি কথা হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে বর্ণ ফেইসবুকে বাবার জন্য দোয়া চাচ্ছেন সবার কাছে।

ষাটের দশকের মাঠ কাঁপানো তারকা ফুটবলার বাদল রায়ের জন্য আসুন আমরাও প্রার্থণা করি; ‘পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক ফুটবলের বাদল।’

(দ্য রিপোর্ট/ওআইসি/এএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ১৯. ২০১৪)