৭৯ হাজার কোটি টাকার নতুন এডিপি আসছে
আগামী অর্থবছরের (২০১৪-১৫) জন্য ৭৯ হাজার কোটি টাকার (স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন ছাড়া) নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আসছে। যা হবে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। ইতোমধ্যেই এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সরকারের নিজস্ব তহবিলের কত এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে কত টাকা ধরা হবে সেটি চূড়ান্ত করতে আবারও বৈঠকে বসবে অর্থমন্ত্রণালয়।
চলতি অর্থবছরে ৬৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা এডিপি বাস্তবায়িত হচ্ছে। সে তুলনায় নতুন এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে ১৩ হাজার ১২৮ কোটি টাকা।
নতুন এডিপিতে ভৌত অবকাঠামো খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। কেননা সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার এবং উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এ খাতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আকারও বাড়ছে একই কারণে।
আগামী অর্থবছরে নতুন এডিপি সরকারের চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। কেননা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৯ হাজার কোটি টাকা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. শামসুল আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে জিডিপিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অংশ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। গত অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল জিডিপির ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সংশোধিত এডিপির আকার আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির ৯৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। বিগত চার বছর ধরে এই বাস্তবায়নের হার ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখী এবং গত অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নে রেকর্ড গড়েছে। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরেও সর্বোচ্চ আকারের এডিপি বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাই আগামী অর্থবছরও এডিপির আকার বাড়বে এটিই স্বাভাবিক। এর অর্থই হচ্ছে সরকারি বিনিয়োগের সক্ষমতা বাড়ছে। ফলে বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়বে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে চলতি অর্থবছরের (২০১৩-১৪) জন্য ৬৫ হাজার ৮৭২ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪১ হাজার ৩০৯ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৪ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যা গত অর্থবছরে (২০১২-১৩) মোট এডিপির আকার ছিল ৫৫ হাজার কোটি টাকা। তুলনামূলকভাবে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে তার আগের অর্থবছরের চেয়ে বেড়েছিল ১০ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে গত কয়েক বছরের এডিপির আকার বৃদ্ধির অবস্থা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ছিল ৪৬ হাজার কোটি টাকা, পরবর্তীতে তা কাঁটছাঁট করে নামিয়ে আনা হয়েছিল ৪০ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার মূল এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়, পরবর্তীতে তা ৩৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) করা হয়েছিল। ২০০৯-১০ অর্থবছরে মূল এডিপি ছিল ৩০ হাজার ৫০০ কোটি, সংশোধন করে ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মূল এডিপি ছিল ২৫ হাজার ৬০০ কোটি, সংশোধিত ২৩ হাজার কোটি টাকা, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে মূল এডিপি ২৬ হাজার ৫০০ কোটি সংশোধন করে নামিয়ে আনা হয় ২৩ হাজার কোটি টাকায়। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে মূল এডিপি ২৬ হাজার কোটি টাকা, সংশোধন করে তা নামিয়ে আনা হয় ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকায়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মূল এডিপি ছিল ২৪ হাজার ৫০০ কোটি, সংশোধন করে ধরা হয় ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে মূল এডিপি ২২ হাজার কোটি, সংশোধিত ২০ হাজার ৫০০ কোটি, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে মূল এডিপি ২০ হাজার ৩০০ কোটি, সংশোধিত ১৯ হাজার কোটি। ২০০২-০৩ অর্থবছরে মূল এডিপি ১৯ হাজার ২০০ কোটি, সংশোধিত ১৭ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং ২০০১-০২ অর্থবছরে মূল এডিপি ১৯ হাজার কোটি, সংশোধন করে নামিয়ে আনা হয় ১৬ হাজার কোটি টাকায়।
(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এইচএসএম/এএল/ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৪)