দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়নে ফের সময় পেয়েছে সরকার। গেজেট জারির বিষয়ে আদালতের আদেশ আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

রবিবার (১৫ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এই সময় মঞ্জুর করেন।

সবশেষ ১২ ডিসেম্বর শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রণয়ন করতে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। তবে আজ সেই নির্ধারিত দিনে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম পুনরায় চার সপ্তাহের সময় আবেদন করলে আদালত ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করেন। সেদিনই এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধি চূড়ান্ত করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে আপিল বিভাগ এর আগে কয়েক দফায় সেময় দেন। সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন না করায় ৮ ডিসেম্বর আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে তলব করে। আইন ও বিচার বিভাগ সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হককে ১২ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

তবে ১১ ডিসেম্বর রাতে আইন মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রের মাধ্যমে জানায়, নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয় থেকে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে এর একটি অনুলিপিও পাঠানো হয়।

যাতে বলা হয়, ‘বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক আচরণ বিধিমালা, শৃঙ্খলাবিধিমালা এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (সার্ভিস গঠন, সার্ভিস পদে নিয়োগ ও বরখাস্তকরণ, সাময়িক বরখাস্তকরণ ও অপসারণ) বিধিমালা-২০০৭ সংশোধনকল্পে সুপ্রিম কোর্টের প্রস্তাবিত খসড়া গেজেটে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই, মর্মে রাষ্ট্রপতি সানুগ্রহ সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন।’

তবে রাষ্ট্রপতির এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে ১২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ দ্বিমত পোষণ করেন। আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপতিকে ভুল বুঝানো হচ্ছে। বিধি প্রণয়ন সম্পর্কে আপিল বিভাগ বলেন, এটা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্ন। এখানে কোনো কম্প্রোমাইজ নেই।

ওই দিন আদালতের নির্দেশ মোতাবেক দুই সচিব উপস্থিত ছিলেন। তাদের উদ্দেশ করে আপিল বিভাগ বলেন, ‘এটা আপনারাই করে পাঠিয়েছিলেন। মাসদার হোসেন মামলার আলোকে আমরা শুধু সংশোধন করে দিয়েছি। মাসদার হোসেন মামলার রায় সরকার মেনে নিয়েছে। আমরা এখান থেকে ব্যাক করব না।’

একই সঙ্গে আপিল বিভাগ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়ে শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। তবে আজ সেই নির্ধারিত দিনে আবারও রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদন করে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গেজেট প্রকাশের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

মাসদার হোসেন মামলার রায় ঘোষণার আট বছর পর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়। ওই সময় যে চারটি বিধিমালা গেজেট আকারে জারি করা হয়েছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি, ছুটি মঞ্জুরি, নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলাবিধান এবং চাকরির অন্যান্য শর্তাবলি) বিধিমালা, ২০০৭ একটি। যেখানে বলা হয়েছে, পৃথক বিধি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধান করা হবে ১৯৮৫ সালের গভর্নমেন্ট সার্ভিস রুলস অনুযায়ী।

তবে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের ৭ নম্বর নির্দেশনা অনুযায়ী সেই জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের জন্য পৃথক শৃঙ্খলাবিধি তৈরি নিয়েই এই শুনানি চলছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে সরকার বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কিছু পদের বেতন স্কেল বৃদ্ধি করে। এতে অন্য ক্যাডারদের সঙ্গে অসঙ্গতি দেখা দেয়। তৎকালীন সরকার এই অসঙ্গতি দূর করার জন্য ১৯৯৪ সালের ৮ জানুয়ারি জজ আদালতের বেতন স্কেল বাড়িয়ে দেয়। প্রশাসন ক্যাডারের আপত্তির মুখে সরকার ওই বেতন স্কেল স্থগিত করে।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেনসহ ৪৪১ জন বিচারক ১৯৯৫ সালে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৯৯৭ সালে হাইকোর্ট পাঁচ দফা সুপারিশসহ ওই মামলার রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ১৯৯৯ সালে আপিল বিভাগ ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করার ঐতিহাসিক রায়টি দেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এস/এম/জানুয়ারি ১৫, ২০১৭)