দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, জেলা পরিষদের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসের ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে মঙ্গলবার ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনচিত্র ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের তথ্য পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচন যে পদ্ধতিতে হয়েছে তাতে জেলা পরিষদ কার্যকর হবে না। তবুও এটিকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চাই। জনগণের আস্থাশীল নির্বাচনের জন্য শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জাকির হোসেন প্রমুখ।

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির নির্বাচকমণ্ডলী একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এই নির্বাচকমণ্ডলীকে সাধারণ ভোটাররা স্ব স্ব এলাকার বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন; অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নির্বাচনে নির্বাচকমণ্ডলী হিসেবে কাজ করার জন্য নয়।

তিনি বলেন, সরাসরি জনগণের ভোটের পরিবর্তে নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে জেলা পরিষদের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করার বিধানটিকে আমরা সুজনের পক্ষ থেকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে না পারলেও, প্রথমবারের মতো নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জেলা পরিষদ গঠনের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের দিন, এমনকি নির্বাচনের পর পর্যন্ত যে চিত্র আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি তাতে আমাদের সেই আশা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে চিত্র আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে; আইনগতভাবে এই নির্বাচন নির্দলীয় হলেও ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয়ভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। অন্য বড় কোনো রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী না দেওয়ায় এই নির্বাচন ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি এবং কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনাও ছিল না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে মূলত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ওপর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের চাপ না থাকলেও স্থানীয়ভাবে ছিল। দশম জাতীয় সংসদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ধারাবাহিকতায় ২১টি জেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অসংখ্য প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাতীয় সংসদ সদস্য ব্যাপকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। অনেক সংসদ সদস্য টিআর, কাবিখা ও অর্থ বরাদ্দের প্রলোভন দেখিয়ে নিজের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চান। স্পিকারের অনুরোধ উপেক্ষা করে অনেক সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করেন। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সারাদেশে ব্যাপক অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে ভোট কেনার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনের আগে ভয় দেখানো হয়েছে। নির্বাচনের আগে টাকা বিতরণ নিয়ে নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে, এমনকি নির্বাচন পরবর্তীকালেও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। টাকা নিয়ে ভোট না দেওয়ায় নির্বাচনের পর ভোটারদের কাছ থেকে টাকা ফেরত নেওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটে। মামলা তথা রুলনিশি মাথায় নিয়ে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা তাদের হলফনামায় শিক্ষা, অর্থ ও সম্পদসহ যেসব তথ্য দিয়েছেন তাতে প্রকৃতচিত্র ছিল না। নির্বাচন কমিশনও এ ব্যাপারে কোনো যাচাই-বাছাই করেনি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএম/এপি/জানুয়ারি ১৭, ২০১৭)