দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বারাকার পরিচালক ও নারকব ফাউন্ডেশনের সভাপতি ব্রাদার রবি পিউরিফিকেসন বলেছেন, আমাদের দেশে মাদক ব্যবহারকারীদের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে সংবাদপত্রের খবর, নিরাময় কেন্দ্রগুলো ও বিভিন্ন সূত্রের মতে এখানে অন্তত ৭০ লাখ মাদক ব্যবহারকারী রয়েছে। আর এই মাদকনির্ভরশীলতার ব্যাপ্তি ও ভয়াবহতা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে বুধবার ‘মাদকনির্ভরশীলতা ও পরিবার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাদকবিরোধী প্রচারণার মাস উপলক্ষে বারাকা ও নারকব ফাউন্ডেশন এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।

ব্রাদার রবি পিউরিফিকেসন বলেন, মাদকের সর্বনাশা প্রবণতা শহর থেকে গ্রামে সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই মাদক নির্ভরশীলতার কারণে পরিবারের প্রিয়জন খুন, পরিবারে বিচ্ছেদ সৃষ্টি ও সমাজে নানা ধরনের অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে কর্মক্ষম ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ মাদকাসক্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকের নেশায়সচ্ছল সাজানো সংসার ভেঙে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তিকে নিয়ে নিরূপায় ও দিশেহারা হয়ে পড়ে পরিবার। আবার অনেক সময় লোকলজ্জার ভয়ে এ বিষয়টি গোপন করে যায়। কিন্তু সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে তখন তারা চিকিৎসার পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। বিষয়টি গোপন করার মূল কারণ হচ্ছে এ সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা। তারা জানেন না মাদকাসক্তি একটি রোগ। যা অন্য রোগের মতোই প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করানো না হলে পরবর্তীতে পরিণতি ভয়াবহ বা মারাত্মক হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, মাদক গ্রহণকারীরা প্রতিনিয়ত মিথ্যা কথা বলেন। মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তিদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তারা নিজেদের সমস্যাটিকে অস্বীকার করে এবং মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়। মূলত: নিজের ব্যর্থতা ও বাস্তবতার চাপ কমাতে তারা এ উপায়টি বেছে নেয়।

আধুনিক গবেষণার বরাত দিয়ে ব্রাদার রবি পিউরিফিকেসন বলেন, মাদক ব্যবহারে বংশগতির প্রভাব ৫০% এর বেশি। অর্থাৎ পিতামাতার মাদক গ্রহণ পরবর্তী প্রজন্মের মাদক গ্রহণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পিতামাতার বিচ্ছেদ, পৃথক বসবাস বা সম্পর্কের জটিলতা সন্তানের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে থাকে।

তিনি বলেন, বর্তমানে মাদকসেবীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ইয়াবার জনপ্রিয়তা বেশি। সব থেকে ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে এই মাদক মস্তিষ্কের গঠন ও স্বাভাবিক কর্মক্ষমতাকে পরিবর্তন করে দেয়। ফলশ্রুতিতে সন্দেহবাতিকতা, দ্বন্দ্ব, উদ্বেগ, আক্রমণাত্মক-সহিংস-হিংস্র-বৈরী আচরণ, হেলুসিনেশন, অতিমাত্রায় সক্রিয়তা ইত্যাদি অসুস্থতা দেখা দেয়। যেহেতু ইয়াবা সেবন করলে ঘুম হয় না, সেহেতু অনেক ইয়াবাসেবী ঘুমানোর জন্য ইয়াবার পাশাপাশি ঘুমের ঔষধ বা অন্যান্য মাদকও সেবন করে। এতে দুই বিপরীত মেরুর মাদক মস্তিষ্কে চাপ তৈরি করে কোষ ও স্নায়ুকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বারাকার মনোরোগ চিকিৎসক ডা. জসিম, মাদকাসক্তিমুক্ত মো. জাহাঙ্গীর, মাদকাসক্তি মুক্ত এক স্বামীর স্ত্রী সেলিনা আক্তার সেফা প্রমুখ।

(দ্য রিপোর্ট/এমএম/এপি/এনআই/জানুয়ারি ১৮, ২০১৭)