দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবনের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে উদ্বেগের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ আন্দোলনের নেতা আল গোরকে তিনি একথা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বাংলাদেশে এসে নিজের চোখে ওই এলাকা ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

সুইজারল্যান্ডের ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে গত বুধবার সন্ধ্যায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘লিডিং দ্য ফাইট এগেইনস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব প্রদান) শীর্ষক প্লেনারি সেশনে আলোচনার এক পর্যায়ে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা ওঠে। ওই সেশনের একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেছেন তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

শেখ হাসিনার পাশে বসে আল গোর তখন বলেন, গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত সৌরশক্তির প্যানেল স্থাপনকারী দেশ ছিল। কিন্তু এখন সেই গতি ধীর হয়ে গেছে। এখন সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (বাদাবন), বেঙ্গল টাইগারের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল সুন্দরবনে একটি নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। হাজার হাজার মানুষ এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে।

এ সময় তিনি এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার পরামর্শ দিয়ে এর পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার দ্বিগুণ করার পরামর্শ দেন।

বিল ক্লিনটনের ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রামপালে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এই বিদ্যুৎ প্রকল্পে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না, মানুষ কেন এই ইস্যুটা তুলছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশ্বের সব জায়গাতেই রয়েছে। ভালো কথা...আমরা কোথায় এটা নির্মাণ করছি। এটা সুন্দরবন থেকে অনেক অনেক দূরে নির্মাণ করা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, পরিবেশ যাতে আক্রান্ত না হয় সেজন্য আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।’

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় ২০০০ সালে গড়ে তোলা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটাতো নতুন নয়, আমাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আগেও রয়েছে, যেটা অতো আধুনিক নয়। দিনাজপুর জেলায়, ঘনবসতিপূর্ণ এই জেলায় পরিবেশের ওপর নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি। সেখানে ফসল হচ্ছে, প্রচুর গাছপালা রয়েছে, এমনকি খুব ভালো আমের ফলনও সেখানে হয়।’

তিনি বলেন, যারা ২০০০ সালে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কেন্দ্র নিয়ে কথা বলেনি, কিন্তু এখন সুন্দরবন এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে কথা বলছে। প্রশ্ন জাগে, তার মানে কি তারা মানুষের চেয়ে সুন্দরবন ও বাঘ নিয়ে বেশি চিন্তিত?

পরিবেশ নিয়ে তার সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা অনেক উদ্যোগ নিয়েছি..আমাদের উপকূলীয় এলাকায় সবুজ বেষ্টনী তৈরি করেছি। আমরা আমাদের বন বৃদ্ধি করেছি। আমি যখন ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হই, তখন বন ছিল মাত্র ৭ শতাংশ, ক্রমান্বয়ে আমরা ১৭ শতাংশ করতে পেরেছি। আমাদের টার্গেট হচ্ছে এটাকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত করা।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/এনআই/জানুয়ারি ২০, ২০১৭)