দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সুন্দরবনের কাছে বাগেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রযুক্তির বিষয়ে অভিজ্ঞতার অভাবে বিরোধিতা হচ্ছে জানিয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘আমাদের কাজটাও আমরা চালিয়ে যাব। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পরিবেশবাদীরা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসবেন।’

রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শনিবার (২১ জানুয়ারি) ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আন্তর্জাতিক চাপ আছে কিনা- একজন সাংবাদিক জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কোন আন্তর্জাতিক চাপের কথা আসে না। আমার মনে হয় যারা পরিবেশবাদী ও পরিবেশবিদ তাদের মধ্যে দুই রকম মতামত থাকে।’

‘আমি মনে করি আমাদের পরিবেশ আইন মেনে কাজ করলে আমরা পরিবেশ রক্ষা করতে পারি। সেটা মেনেই আমরা করছি, সেটা মেনে করছি কিনা তা দেখবে পরিবেশ বিভাগ।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ও আমাদের দেশের পরিবেশবাদীরা আছেন, তাদের কনসেন্ট তারা বলবেন, আমরা চেষ্টা করেছি তাদের বোঝানোর, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেটা আমরা করে যাব। কিন্তু আমাদের (প্রকল্পের) কাজটাও আমরা চালিয়ে যাব।’

‘কারণ এই টেকনোলজি (প্রযুক্তি) আমরা বাংলাদেশে এখনও এক্সপেরিয়েন্স করিনি। অনেকের কাছে ধারণা হতে পারে এ টেকনোলজি ক্ষতিকর। অনেকের ধারণা ছিল, আইনুন নিশা্ত স্যার নিজে বলেছেন, পদ্মা সেতুর করার আগে চিন্তা করেছিলাম এখানে ইলিশের গতিপথ নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং পদ্মা সেতু করা যাবে না। কিন্তু পদ্মা সেতু তো সেটাকে মাথায় রেখেই করা হচ্ছে। এবং পদ্মা সেতু হচ্ছে। যে পরিবেশবাদীরা ইলিশের কথা বলেছেন তারা চুপ হয়ে গেছেন’ বলেন নসরুল হামিদ।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি এ ধরনের পাওয়ার প্ল্যান্টের অভিজ্ঞতা অর্জন করব আমরা, যখন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়ে যাবে তখন পরিবেশবাদীরা বিরোধিতার জায়গা থেকে সরে আসবেন।’

এত বিরোধিতার পরও সরকার রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে অনড় কেন- ‘এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে কোন বড় প্রকল্প করতে গেলে একটি গণতান্ত্রিক দেশে দুই ধরনের মতামত থাকবেই।’

‘ওনারা (দেশ-বিদেশের পরিবেশবাদীরা) বলবেন, আমরাও কথা বলব। আমরা মনে করি, যেটা আমাদের দেশের সেটা একটা এক্সাম্পল হওয়া উচিত। আমরা মনে করছি যে প্রযুক্তিতে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র করতে যাচ্ছি সেটা সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে না।’

‘আমাদের দেখতে হবে সেটা করার পর যে কিউমিলেটিভ এফেক্ট হবে কিনা, সেটা আমার দেখার বিষয় না। সেটা আমাদের দেখার বিষয়, আমার একার নয়। পরিবেশকে কাছে নিয়েই কিন্তু আমাদের ডেভেলপমেন্ট চলতে হবে। দেখতে হবে কত অল্প পরিমাণে ক্ষতি করে আমাদের ডেভেলপমেন্টকে কাজে লাগাতে পারি।’

সুইজারল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পরিবেশবাদী আল গোর রামপালের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখার প্রস্তাব দিয়েছেন।

জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আল গোর একটা জায়গায় বসে কথা বলছেন, এজন্য প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছেন, তুমি আমার দেশে আসো। তুমি আগে দেখ কি অবস্থায় আছে। ইন্টারনেটে তথ্য দিয়ে সব সিদ্ধান্ত দেওয়া যায় না। আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রী সঠিক উত্তর দিতে পেরেছেন। উনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শক্তভাবে উত্তর দিয়েছেন, যে এটা তার দেশ এই দেশের ভাল-মন্দ সুন্দর রাখায় তার চেয়ে বড় পরিবেশবাদী আর বিশ্বে নেই।’

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এআরই/এনআই/জানুয়ারি ২১, ২০১৭)