চবিতে ছাত্রীকে পেটালেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেত্রী
চবি প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সুমাইয়া জাহান নামের এক ছাত্রীকে বেধড়ক মারধর করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য কাজী ফারিয়া মুনতাহা মুহী। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হলের ৪১৯ নাম্বার রুমে শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে। মারধরের শিকার সুমাইয়া জাহান সাংস্কৃতিক কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ছাত্রলীগ নেত্রীর দাবি, সে (সুমাইয়া জাহান) ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সাথে জড়িত। তবে হলের প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকরা বলছেন ভুক্তভোগী ছাত্রী ইসলামী ছাত্রী সংস্থার নয়। ব্যক্তিগত আক্রোশের ফলে তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।
হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হলের ৪১৯ নাম্বার রুমে আসন বরাদ্দ পায় বাংলা বিভাগের সুমাইয়া জাহান ও ইতিহাস বিভাগের তাজিন। কিন্তু কয়েকদিন আগে ওই কক্ষে হল প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী কাজী ফারিয়া মুনতাহা মুহী বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সুমাইয়া আহম্মেদ মুন এবং একই শিক্ষাবর্ষের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের কেয়াকে থাকতে দেন।
এ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে ওই রুমে বরাদ্দকৃত শিক্ষার্থীদের সাথে তাদের সমস্যা চলছিল। পরে হল কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানানোর পর প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকরা বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন। এ নিয়ে শুক্রবার সকালে হলের প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকরা বিষয়টি মৌখিক ভাবে সমাধান করেন। কিন্তু এর পরপরই ছাত্রলীগ নেত্রী কাজী ফারিয়া মুনতাহা মুহী ওই রুমে গিয়ে সুমাইয়া জাহানকে বেধড়ক মারধর করেন। এ সময় সুমাইয়াকে ওই রুমের ভেতরে রেখে বাহির থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রলীগ নেত্রী। পরে হলের প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের সহায়তায় সুমাইয়াকে উদ্ধার করা হয়।
মারধরের শিকার সুমাইয়া জাহান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘আমাকে প্রথম দিকে রাজনীতি করার জন্য বলত। কিন্তু আমি রাজনীতি করতে আগ্রহী নই জানানোর পর থেকেই আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন মুহী। আর এই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি করতেন।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি হলে সিট পাওয়ার পর ওই সিটে দুজন নতুন ছাত্রীকে তিনি উঠিয়ে দেন। আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় আজ আমাকে আমার রুমে আটকে রেখে মারধর করেন। এক পর্যায়ে দা দিয়ে কুপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে আমাকে রুমে তালা বন্ধ করে রাখেন। এ সময় হল প্রশাসন এসে তালা খুলে আমাকে উদ্ধার করে।’
এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক সংগঠন অঙ্গনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সানজিদা হান্নান বলেছেন, ‘সুমাইয়া অঙ্গনের একজন সক্রিয় কর্মী। সে কোনো ধরনের রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘রাজনীতি করলেই হলে থাকতে পারব, এটা কেমন কথা? সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো অধিকার নাই। আমরা এ ঘটনার শাস্তি দাবি করছি।’
মারধরের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেত্রী কাজী ফারিয়া মুনতাহা মুহী বলেছেন, ‘আমার দুইজন জুনিয়রকে ওই রুমে উঠিয়ে ছিলাম। সে (সুমাইয়া) আমার জুনিয়রদের নানাভাবে হয়রানি করে। সেই সাথে সে আমার জুনিয়রদের বলে ছাত্রলীগ করো কেন? বিষয়টি জানার পর আমি ওই রুমে গিয়ে ইসলামি ছাত্রী সংস্থার অনেক বই পাই। সে ছাত্রী সংস্থার সাথে জড়িত।’
মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ‘সে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। আর সে মিথ্যা বলে বেড়াচ্ছে।’
এসব বিষয়ে প্রীতিলতা হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. শান্তি রানী হালদার বলেছেন, ‘আজ (শুক্রবার) দুপুরে আমি ৪১৯ নাম্বার রুমের সমস্যা সমাধান করে নিচে আসতে না আসতেই কাজী ফারিয়া মুনতাহা মুহী এ ঘটনা ঘটায়। পরে আমিসহ হলের আবাসিক শিক্ষকরা গিয়ে ওই রুমের তালা খুলে সুমাইয়াকে উদ্ধার করি।’ সুমাইয়া কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত নয় বলেও জানান তিনি।
(দ্য রিপোর্ট/কেআই/জেডটি/এনআই/জানুয়ারি ২৭, ২০১৭)