চট্টগ্রাম কাস্টমসে প্রতিটি সেক্টরে ঘুষ লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক
দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের প্রতিটি সেক্টরে ঘুষ লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর অনুসন্ধান দল।
দুদক কমিশনার এ এম আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি দল সোমবার (৩০ জানুয়ারি) কাস্টমস হাউস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদের বিষয়টি তুলে ধরেন।
অনুসন্ধান দলের অপর দুই সদস্য হলেন দুদকের মহাপরিচালক আতিকুর রহমান ও মুনির চৌধুরী।
টিমের প্রধান দুদক কমিশনার এ এম আমিনুল ইসলাম জানান, চট্টগ্রাম কাস্টমসের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে এই অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রাথমিক অনুসন্ধান ও পরিদর্শনে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এখনই এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
আমিনুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি কমলেও কাস্টমসে বেড়েই চলেছে। দুর্নীতি বন্ধে দুদক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
আমিনুল ইসলাম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, 'যারাই দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
দুদক কর্মকর্তারা কাস্টমস হাউসের বিভিন্ন শাখা, দফতর, বন্দর জেটি এবং আমদানি-রফতানির কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে অনিয়ম আছে। এজন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এর আগে সকালে কমিশনারের নেতৃত্বে দুদকের একটি দল কাস্টম হাউসের শুল্কায়ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। কাস্টম হাউস ব্যবহারকারী সিঅ্যান্ডএফ নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। এ সময় দুদকের মহাপরিচালক আতিকুর রহমান ও মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
কাস্টম হাউস মিলনায়তনে দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে ধাপে ধাপে অনিয়ম দূর করতে পারে। অনেক সরকারি অফিস অনিয়ম দূর করেছে। তবে কাস্টম হাউসে এ রকম কিছু দেখতে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ধারাবাহিকভাবে একাধিক পত্রিকায় কাস্টমস হাউস সম্পর্কে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ও টকশোতে ফুটেজ দেখিয়েছে কাস্টমস হাউসের মধ্যে কীভাবে টাকা লেনদেন হয়। এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। এ জন্য নির্দেশনা দিয়ে ছেড়ে দিলে হবে না। কাস্টম হাউসে পরিদর্শনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কাস্টমস কর্মকর্তাদের কক্ষে ফাইল নিয়ে অবাধে চলাচল করে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দুদক কমিশনার বলেন, ‘দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করুন। দুদকও তদন্ত করবে। এখন সতর্ক করার জন্য এসেছি। ২০১৭ সাল হবে দুর্নীতিবাজদের জন্য আতঙ্কের বছর। দুদকের যে ক্ষমতা আইনে আছে, তাতে দুদক বাসা থেকে শুরু করে অফিসসহ সব জায়গায় গিয়ে তল্লাশি করতে পারবে। দুর্নীতিবাজরা অর্থ-সম্পদ যেখানে রাখুন না কেন, গোপন করার সুযোগ পাবেন না।’
পরে দুদকের দলটি বন্দরের জেটি এলাকা পরিদর্শন করে বন্দর ভবনে বন্দর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠক থেকে বের হয়ে দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বন্দর সম্পর্কে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। এখানে সিস্টেম সম্পর্কেও জানা দরকার ছিল। যেসব ক্ষেত্রে দুর্নীতির আশঙ্কা আছে, তা নিয়ে কথা বলেছি। কমিশনে এসব নিয়ে কথা বলব। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ ব্যাপারে জানাব।
(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এনআই/জানুয়ারি ৩০, ২০১৭)