জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। তবে ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত ৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।

এর প্রথম ধাপ হিসেবে ইতোমধ্যেই সমাপ্ত করা হয়েছে তিনটি ইকোনমিক জোনের ওপর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ। অপর একটির জন্য কোনো সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে এগুলো তৈরি হবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে।

তবে কেন সিরাজগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে বিশ্বব্যাংক সহায়তা দেবে না তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা না গেলেও বিভিন্ন সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলটি বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছে হওয়ায় সেখানে নদী, সড়ক ও রেল সব ধরনের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে গ্যাস প্রাপ্তির সুযোগ। কিন্তু শুধুমাত্র নদী ভাঙনের অজুহাত দেখিয়ে সেখানে অর্থনৈাতিক অঞ্চল করার ক্ষেত্রে ভেটো দেয় বিশ্বব্যাংক।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের দায়িত্বে থাকা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আরাস্তু খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খসড়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক। আগামী রবিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে। চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা ও মিরসরাই এবং মৌলভী বাজার জেলার শেরপুরে প্রস্তাবিত ইকোনমিক জোনের ওপর সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে বিশ্বব্যাংক।

ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব দ্য রিপোর্টকে বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে এ সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে সুনির্দিষ্টভাবে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না কী কারণে সিরাজগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করতে বিশ্বব্যাংক সম্মতি দেয়নি।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, বাগেরহাটের মংলায় যে ইকোনমিক জোনটি তৈরির কথা রয়েছে। সেখানে ভূমি উন্নয়নের কোনো সমস্যা নেই এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়েরও প্রয়োজন নেই। অন্য তিনটিতে (চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা ও মিরসরাই এবং মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর) সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে খুব বেশি সমস্যা ধরা না পড়লে এরপরই ট্রান্সজেকশন অ্যাডভাইজার নিয়োগ করবে সরকার। এই অ্যাডভাইজার পরবর্তীকালে দরপত্র আহ্বান করাসহ যাবতীয় কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। এ ছাড়া ওই সব ইকোনমিক জোন তৈরির জন্য জমি উন্নয়ন, সংযোগ সড়ক, পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, অফিস ভবনসহ যাবতীয় অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করবে সরকার। বাকি কাজ হবে পিপিপি’র ভিত্তিতে।

সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরশনের (আইএফসি) সুপারিশের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল চিহ্নিত করা হয়। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বেজার গভর্নিং বোর্ডের প্রথম বৈঠকেই অঞ্চলগুলো প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রামের আনোয়ারার গহিরা ও মিরসরাইয়ে দুটি এবং মৌলভীবাজারের শেরপুর, সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু সংলগ্ন এলাকা ও বাগেরহাটের মংলায় একটি করে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, দেশে দ্রুত শিল্পোন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি ও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ২০১২ সালের এপ্রিলে পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত তারপর প্রক্রিয়া আর খুব বেশি দূর এগোয়নি। অথচ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে অর্থনৈতিক অঞ্চল দ্রুত কার্যকরের জন্য চাপ দিয়ে আসছিল বিশ্বব্যাংক। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠিয়েছিল সংস্থাটি।

অন্যদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ আকর্ষণে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছিল গত বছরের শুরুর দিকে।

এ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও টাস্কফোর্সের সদস্য আরাস্তু খান বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশি বিনিয়োগের বিকল্প নেই। নানা সমস্যার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না। এ সব সমস্যা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগে জটিলতা সৃষ্টি না হয়, সে দিকটি বিবেচনা করে টাস্কফোর্স কাজ করার চেষ্টা করছে।

এর আগে বিশ্বব্যাংক মতামত দিয়েছিল যে, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য ৪০ হাজার একর জমি ব্যবহার করতে পারে সরকার। এক্ষেত্রে আদমজী জুট মিলের মত অলস সরকারি প্রতিষ্ঠান ও রুগ্ন চা-শিল্পের বেশকিছু জমি ব্যবহার করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এদিকে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে বেসরকারি খাত উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ১২ কোটি ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অপর দাতা সংস্থা ডিএফআইডি এ প্রকল্পে ১ কোটি ৭৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।

সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে দায়িত্ব গ্রহণের পর বর্তমান সরকার নতুন ধারণার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের আগস্টে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন ২০১০’ পাস করা হয়। এ আইনের আলোকে ওই বছর ১১ নভেম্বর বেজা প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ছাড়া ২০১২ সালে বেজার কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালনা বিধিমালা অনুমোদন করা হয়।

ইতোমধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলে ব্যাপকভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে শীর্ষ নির্বাহীদের নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ সব কর্মকর্তারা বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে কাঙ্ক্ষিত বিদেশি বিনিয়োগ আসে। টাস্কফোর্সের প্রধান করা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে। অন্যান্যদের মধ্যে সদস্য করা হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিনিয়োগ বোর্ডের সদস্য।

অন্যদিকে ভিশন-২০২১ অনুযায়ী মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে দ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা জরুরি বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এ জন্য সংস্থাটির সহায়তায় ‘সাপোর্ট টু ইকোনমিক জোন অথরিটি’ শীর্ষক একটি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এসবি/সা/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪)