মালোপাড়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ‘ভরাডুবি’
![](https://bangla.thereport24.com/article_images/2014/02/20/Jessore-Malopara.jpg)
আহসান কবীর, যশোর : যশোরের অভয়নগর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী নুরুল হক মোল্যা। আলোচিত সেই চাপাতলা মালোপাড়ার কেন্দ্রে অন্তত আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ভালো করবে এমনটি ধারণা করা হচ্ছিল। সেখানেও বিএনপি প্রার্থীর তিনভাগের একভাগ ভোট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রবিন অধিকারী ব্যাচা। স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন জেগেছে, চাপাতলা মালোপাড়ার কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর এমন শোচনীয় পরাজয় কেন?
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, মালোপাড়ার ঘটনাকে যেভাবে ‘ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে’ প্রচার করা হয়, সাধারণ ভোটাররা তা পছন্দ করেনি। তিলকে তাল বানানোর সমুচিত জবাব তারা ব্যালটের মাধ্যমে দিয়েছেন।
যশোরের রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এএনএম মঈনুল ইসলাম জানান, চাপাতলা চেঙ্গুটিয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে এবার মোট ভোটার ছিল চার হাজার ২৩৮ জন। এদের মধ্যে দুই হাজার ৮৮১ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নূরুল হক মোল্যা বাঘা পান দুই হাজার ৩১, আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রবিন অধিকারী ব্যাচা পান মাত্র ৭১৯ ভোট।
অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী পেয়েছেন বিএনপি প্রার্থীর প্রায় তিনভাগের একভাগ ভোট।
চাপাতলা মালোপাড়ার বাসিন্দা শেখর কুমার বর্মণ জানান, চাপাতলা চেঙ্গুটিয়া আলিম মাদ্রাসার ভোটারদের মধ্যে চেঙ্গুটিয়া, চাপাতলা, বাহিরঘাট, আরজি বাহিরঘাট ও বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের একাংশের অধিবাসীদের ভোট রয়েছে। মোট ভোটারের ৫৫০ থেকে ৬০০ জন হিন্দু। একই তথ্য জানান স্থানীয় সাংবাদিক আবুল হোসেন গাজী।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা ও বিগত জাতীয় সংসদের হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আবদুল ওহাব বলেন, ‘চাপাতলা মালোপাড়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করলে আমার সমস্যা হতে পারে। তবে এটুকু বলতে পারি, ঘটনাটি যা ছিল, তার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় সাধারণ মানুষ তা ভালোভাবে নেয়নি। বিশেষ করে সংখ্যাগুরু মুসলিমরা এ কারণে খুবই বিরক্ত। সাধারণ মানুষের এই সেন্টিমেন্ট ভোটের ওপর প্রভাব ফেলেছে।’
অবশ্য বিএনপি অভয়নগর উপজেলা কমিটির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমান বলেন, ‘৫ জানুয়ারি মালোপাড়ায় মাত্র একটি বাড়ি ভাঙচুর হয়। পরে নিজেদের লোক দিয়ে আরও কিছু বাড়ি ভাঙা হয়, আগুন লাগানো হয়। ঘটনাটি সাম্প্রদায়িক ছিল না। কিন্তু রাজনৈতিক ফায়দা নিতে আওয়ামী লীগ এই ঘটনাকে লুফে নিয়ে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়। কিন্তু স্থানীয় লোকজন ঠিকই জানেন, এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগ নেই। ফলে সুযোগ পেয়ে ভোটাররা মিথ্যা প্রচারণার সমুচিত জবাব দিয়েছে।’
উল্লেখ্য ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় অভয়নগরের চাপাতলা মালোপাড়ায় দু’দল লোকের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। প্রথম এক পক্ষ মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে আহত করে। পরে পাল্টা হামলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুনে পোড়ানো হয়।
এই ঘটনা মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পায়। দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল, সামাজিক-ধর্মীয় সংগঠন থেকে শুরু করে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ ভিড় জমান মালোপাড়ায়। শেষাবধি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও হেলিকপ্টারযোগে উড়ে আসেন মালোপাড়ায়। সাহায্য-সহমর্মিতার বন্যায় ভেসে যায় মালোপাড়া। এখনও সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর নির্মাণে নিয়োজিত রয়েছেন বিজিবি সদস্যরা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমানদের বাড়িঘরের দিকে ফিরে তাকায়নি কেউ। ঘটনার ব্যাপারে দায়ের হওয়া মামলায় এখনও ফেরার জীবনযাপন করছে এলাকাটির কয়েকশ’ ব্যক্তি।
বুধবার ভোট চলাকালে চাপাতলা চেঙ্গুটিয়া আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, লোকজন নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার তিমির বরণ সরকার জানান, ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে আসছেন। পাশে মালোপাড়ার বাসিন্দা মহিন্দ্রনাথসহ একাধিক ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে তারাও একই ধরনের জবাব দেন।
প্রসঙ্গত, বিজয়ী প্রার্থী নুরুল হক মোল্যা পেয়েছেন ৬৯২৮৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী রবিন অধিকারী ব্যাচা পেয়েছেন ৪১৮৮৯ ভোট। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ২৭৩৯৪ ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
(দ্য রিপোর্ট/একে/জেএম/এইচএসএম/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪)