মাহফুজ স্বপন, দ্য রিপোর্ট : প্রথম দফায় ৯৭ উপজেলা নির্বাচনে ভোট পড়েছে গড়ে শতকরা ৬২ দশমিক ৪৪ ভাগ। এসব উপজেলায় ১ কোটি ৬২ লাখ ভোটারের মধ্যে ১ কোটি ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৭ ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন।

এর মধ্যে বৈধ ভোট পড়েছে ৯৬ লাখ ৫২ হাজার ৫৮৪টি। বাতিল ভোটের সংখ্যা ৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৮৩টি।

নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা পেয়েছেন ৪৯ লাখ ১০ হাজার ৭৬৮ ভোট। প্রদত্ত ভোটের হার বিবেচনায় উত্তরবঙ্গের উপজেলাগুলোতে বেশি ভোট পড়েছে।

এসব জেলায় গড়ে ৬৫ ভাগের বেশি ভোট পড়েছে। একক উপজেলা হিসেবে শতকরা হারে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায়। এ উপজেলায় ভোট পড়েছে শতকরা ৮১ দশমিক ৬২ ভাগ। শতকরা ৮১ দশমিক ১৫ ভাগ ভোট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে পঞ্চগড়ের আটোয়ারি উপজেলা।

সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায়। এ উপজেলায় শতকরা ভোট পড়েছে ৩৭ দশমিশ ২০ ভাগ। বৃহস্পতিবার রাতে ইসির প্রাথমিক হিসাব পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচনের তুলনায় উপজেলা নির্বাচনে ২২ ভাগ ভোট বেশি পড়েছে। সংসদ নির্বাচনে শতকরা ৪০ ভাগ ভোট পড়েছিল। সংসদ নির্বাচনের দেড় মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে সব দল অংশ নেওয়ায় ভোটার উপস্থিতি বেড়েছে বলে মনে করছে কমিশন।

তবে তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় এবার ৬ ভাগ ভোট কম পড়েছে। ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত তৃতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গড়ে ভোট পড়েছিল ৬৭ দশমিক ৬৯ ভাগ। চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়েছিল ৬৭ দশমিক ৯১ ভাগ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৭ দশমিক ৬৭ ভাগ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৭ দশমিক ৩৬ ভাগ।

উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দফায় কতভাগ ভোট পড়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ (সিইসি) বলেন, ‘ভোটার টার্ন আউট আমরা ফাইনাল ফিগার দিতে পারছি না। আাপাতত ৬০-৬৫ শতাংশের ওপরে ভোট পড়েছে। এটা আন্দাজ করে বললাম।’

ইসি সূত্র জানায়, সহিংসতা, ব্যালট বক্স ও পেপার জ্বালিয়ে দেওয়ায় ৫টি উপজেলার ১১টি ভোটকেন্দ্রের ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার দুটি, ঝিনাইদহের শৈলকুপার একটি, ঢাকার নবাবগঞ্জের দুটি, বরিশালের বাকেরগঞ্জের একটি ও বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ৫টি কেন্দ্র রয়েছে।

এ কারণে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চেয়ারম্যান ও বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদের ফলাফল স্থগিত রয়েছে। বাকি ফলাফল বুধবারই ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত ফলাফল ঘোষণার জন্য সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার দুটি ও বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ৫টি কেন্দ্রে পুনঃভোট অনুষ্ঠিত হবে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আরও জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ৪৩টি, আওয়ামী লীগ ৩৪টি, জামায়াত ১৩টি, জাতীয় পার্টি ১টি ও অন্যান্য ৫টিতে জয় পেয়েছে।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ৩২টি, আওয়ামী লীগ ২৪টি, জামায়াতে ইসলামী ২৩টি, জাতীয় পার্টি ৩টি ও অন্যান্য ১০টিতে জয় পেয়েছে।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি ৩৪টি ও আওয়ামী লীগ সমান সংখ্যক ৩৪টি, জামায়াতে ইসলাম ১০টি, জাতীয় পার্টি ১টি অন্যান্য ৩টিতে জয়ী হয়েছে।

নির্বাচিতদের নাম গেজেট আকারে প্রকাশের প্রক্রিয়া শুরু করেছে কমিশন। আগামী সপ্তাহে গেজেট প্রকাশিত হতে পারে।

বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত উপজেলা চেয়ারম্যানদের ভোটের হিসাব তৈরি করতেই হিমশিম খেয়েছেন কমিশন কর্মকর্তারা। এরপর ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের ভোটের হিসাব চূড়ান্ত করা হবে।

চেয়ারম্যান পদে ভোটের সংখ্যা বিবেচনায় সর্বোচ্চ বেশি ভোট পেয়েছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপার আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন।

তিনি পেয়েছেন এক লাখ ২৯ হাজার ৩৬৭ ভোট। এক লাখ ২৫ হাজার ৯২৩ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. গোলাম রব্বানি।

এ ছাড়াও ৮০ শতাংশের উপরে ভোট পড়েছে তিনটি উপজেলায়, ৭০ শতাংশের উপরে ২০টিতে, ৬০ শতাংশের উপরে ৪৪টিতে, ৫০ শতাংশের উপরে ২৪টিতে, ৪০ শতাংশের উপরে ৪টিতে ও শতকরা ৪০ ভাগ ভোট পড়া উপজেলার সংখ্যা ১টি।

৮০ শতাংশের উপরে ভোট পড়া উপজেলাগুলো হচ্ছে- পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও রাজশাহীর মোহনপুর।

৭০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়া উপজেলাগুলো হচ্ছে- পঞ্চগড়ের বোদা, বেদীগঞ্জ, দিনাপুরের কাহারোল ও খানসামা, রংপুরের মিঠাপুকুর, ভুরুঙ্গমারী, বগুড়ার দুঁপচাচিয়া, নন্দীগ্রাম ও শেরপুর, নওগাঁর রাণীনগর ও মহাদেবপুর, নাটোরের সিংড়া, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, পাবনার আটঘড়িয়া, মেহেরপুর সদর, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা, ঝিনাইদহের কোঁটচাদপুর, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া, রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দী ও খাসড়াছড়ির মানিকছড়ি।

৬০ শতাংশের ওপরে ভোট পড়া উপজেলাগুরো হচ্ছে- পঞ্চগড় সদর, নীলফামারীর সৈয়দপুর, জলঢাকা, রংপুরের তাঁরাগঞ্জ, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, গাইবান্ধার সাঁঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, বগুড়ার ধুনট, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, পাবনার সাঁথিয়া, কুষ্টিয়ার সদর, ঝিনাইদহের সদর, কালিগঞ্জ, শৈলক’পা, যাশোরের অভয়নগর, মাগুরার সদর, শ্রীপুর, নড়াইলের কালিয়া, খুলনার কয়রা, দিঘিলীয়া, সাতক্ষীরা আশাশুনি, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, কিশোরগঞ্জের নিকলী, বাজিতপুর, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, শিবালয়, নরসিংদীর বেলাবো, রাজবাড়ী সদর, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর, শরিয়তপুরের ড্যামুডা, গোসাইরহাট, সুনামগঞ্জের ছাতক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, সিলেটের বিশ্বনাথ, কোম্পানীগঞ্জ, হবিগঞ্জের মাধবপুর, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, মহলছড়ি, পানছড়ি ও রামগড়।

তাছাড়া ৫০ শতাংশের নিচে ২৯টি উপজেলায় ভোট পড়েছে।

এর আগে ১৯৮৫, ১৯৯০ ও ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এমএস/এমসি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪)