কুবি প্রতিনিধি : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির লাগাতার ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে টানা ১৯ দিন পরে মঙ্গলবার থেকে ক্লাস ও পরীক্ষায় ফিরেছেন শিক্ষকরা। ফলে দীর্ঘদিন পরে এক অন্যরকম আমেজ বিরাজ করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস মানেই হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এক মিলনমেলা যার অন্যরকম মাধ্যম হচ্ছে ক্লাস-পরীক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে পড়াশুনা করা। আর ক্যাম্পাসে যদি ক্লাস-পরীক্ষাই বন্ধ থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের সকল কাজে নেমে আসে স্থবিরতা। ঠিক তার বিপরীত ঘটেনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। দীর্ঘ ১৯ দিন ধরে চলছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ৬ দফা দাবিতে আন্দোলন যার অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয় ক্লাস-পরীক্ষা। আবারও শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ভরে ওঠে প্রিয় ক্যাম্পাস।

৫ ফেব্রুয়ারি ক্লাস-পরীক্ষা চালুর বিষয়ে ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই ক্যাম্পাসের হলগুলোতে ও আশেপাশের মেসগুলোতে আসতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই আমেজপূর্ণ হয়ে ওঠে লালমাটির ক্যাম্পাস। ক্লাসের ফাঁকে শিক্ষার্থীরা আড্ডায় বসেন ক্যাম্পাসের সেই চিরচেনা কাঁঠালতলা, পিএ চত্বর, থিয়েটার বুথ, শহীদ মিনারের পাদদেশ, সাংবাদিক চত্বর, লালন চত্বর, মাতুব্বর মোড়, মিড পয়েন্ট, কৃষ্ণচূড়া তলাসহ ক্যাম্পাসের আশেপাশের চায়ের দোকানগুলোতে।

শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সমিতির লাগাতার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পরে ক্যাম্পাস চালু হওয়ায় আমরা অনেক আনন্দিত। আশা করবো শিক্ষকরা আমাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিবেন।

শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, আমরা কোন সময়ই চাই না শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হোক। বাধ্য হয়ে এমন কোন কর্মসূচিতে যেতে হয়েছে। শিক্ষর্থীদের ক্ষতি পূষিয়ে নেওয়া সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন এমনটি আশ্বাস দেন তারা।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলী আশরাফ বলেন, ‘অনেকদিন পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী-কর্মকর্তাসহ সবার মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। আশা করি এমন স্বাভাবিক পরিস্থিতি যেন সামনেও থাকে। আশা করি যেন শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দেন।’

উল্লেখ্য, ৬ দফা দাবিতে গত ২২ জানুয়ারি থেকে লাগাতারভাবে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আসছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে ১৯ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৯টি বিভাগে একটিও ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। ২২ জানুয়ারি থেকে অন্তত ৪৩টি চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে বলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যলয় সূত্রে জানা যায়। ১৭ জানুয়ারি গভীর রাতে দুই শিক্ষকের বাসায় পরিকল্পিত হামলার দ্রুত রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা, শিক্ষক লাঞ্ছনায় অভিযুক্ত ডিন এমএম শরীফুল করীমকে তদন্ত চলাকালীন সময়ে সকল পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া, প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিনকে সকল প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি, ১ আগস্ট ঘটে যাওয়া খালিদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষকরা। পরবর্তীতে গত ২৬ জানুয়ারি ক্লাস-পরীক্ষা চালুর দাবিসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনরত ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থী বায়েজিদ ইসলাম (গল্প) লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক নাহিদুল ইসলামকে তার স্ত্রীর সামনে লাঞ্ছিত করে। এই ঘটনায় ঐ শিক্ষক বিচারের দাবিতে উপাচার্যকে লিখিত আবেদন করেন। পরে রবিরার (৫ জানুয়ারি) উপাচার্য শিক্ষদের চারটি দাবি মেনে নিলে তারা আন্দোলন স্থগিত করে।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭)