যশোর প্রতিনিধি : শহীদ মিনার ফুলে ফুলে ভরে ওঠার দিন এখনো সপ্তাহখানেক বাকি। যেদিন ভাষা শহীদদের স্মরণে বাঙালি হাঁটবে খালি পায়ে। গাইবে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।’ তবে এমএম কলেজ বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সেজেছে একুশের সাজে। ক্যাম্পাস জুড়ে যেন একুশের সুবাস, একুশের আবহ। যার কেন্দ্রবিন্দুতে ‘সংহতি-২০১৭’।

দুই বাংলার মানুষের আত্মার মেলবন্ধন সৃষ্টিতে ভাষার মাসে তৎপর ‘সংহতি-২০১৭’। ভারতের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের সংহতি-২০১৭ এর আহ্বায়ক দীপন দাসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে গত ১২ ফেব্রুয়ারি। ইতোমধ্যে তারা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয় সংহতি অনুষ্ঠানে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার যশোর সরকারি এমএম কলেজে আয়োজন করা হয় ‘ভারত-বাংলাদেশের সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি-মৈত্রী মেলবন্ধন’।

যশোর সরকারি এমএম কলেজের মধুমঞ্চে অধ্যক্ষ প্রফেসর মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় দীপন দাস বলেন, ‘যে ভাষার জন্য মানুষ রক্ত ঝরায়, তা আমার অহংকার। আর এই ভাষার মানুষ আমার ভাই। সীমানা দিয়ে, কাঁটা দিয়ে আমার ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক রোধ করা যাবে না। ধর্ম দিয়ে, সীমানা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জসিম উদ্দিনকে বিচার চলবে না। এরা বাঙালির পূর্বপুরুষ। ধর্ম আর কাঁটা তারের বেঁড়া এদের ভাগ করতে পারবে না। এই শিক্ষা আমাদের দিয়ে গেছেন ধীরেন্দ্রনাথ। তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ‘বঙ্গ সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ধর্মে আমি খ্রীষ্টান হতে পারি, মুসলমান হতে পারি, হিন্দু হতে পারি, বৌদ্ধ হতে পারি; কিন্তু সবকিছুর আগে আমরা বাঙালি।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রফেসর (অব.) নূর মোহাম্মদ, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক এআইএম শরীফ হোসেন, ভারত-বাংলাদেশের সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি-মৈত্রী মেলবন্ধন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক প্রফেসর শফিউল ইসলাম সরদার, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি পল নিয়ান গোমেজ, এমএম কলেজ ছাত্র প্রতিনিধি রওশন ইকবাল শাহী।

সকালে মশাল প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমগ্র আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা। পরে অধ্যক্ষ প্রফেসর মিজানুর রহমান ও সংহতি-২০১৭ এর আহ্বায়ক দীপন দাসের নেতৃত্বে শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অপর্ণ করেন। এর পর পরই ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের সাথে ক্যাম্পাসে বের হয় প্রভাতফেরি।

দীপন দাস জানান, শহীদ দিবসকে সামনে রেখে দুই দেশের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টির জন্য সংহতি কাজ করছে। গত ২০১৫ ও ২০১৬ সালেও সংহতি বাংলাদেশে আসে। সংহতির এবারের স্লোগান ‘এই পথ যদি শেষ না হয়।’ গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে সংহতির বাংলাদেশ অংশের কাজ শুরু হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি হবে ভারতের বর্ধমানে আর ১৮ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দুই বাংলার মেলবন্ধনের সংহতি-২০১৭ এর বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকবে কলকাতায়।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭)