মতিনুজ্জামান মিটু, দ্য রিপোর্ট : প্রাবন্ধিক, লেখক, গবেষক, সাহিত্য সমালোচক, রাষ্ট্রচিন্তাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারির আগের সৃষ্টিশীলতা আজ আর নেই। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দ্য রিপার্টের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস রূপে পালন করতাম। তখন আমাদের চেতনা ছিল সংগ্রামী ও সৃষ্টিশীল। প্রতিবছর একুশ উৎযাপনের মধ্য দিয়ে আমরা প্রগতির পথে অগ্রসর হতাম। কিন্তু ১৯৭২ সাল থেকেই এটা হয়েছে সরকারি অনুষ্ঠান।

তিনি আরও বলেন, আগে একুশের প্রধান অনুষ্ঠান হতো শহীদ মিনারে। পরে ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলা একাডেমীতে স্থানান্তর হয় এবং অনুষ্ঠানাদি সরকারি চরিত্র লাভ করে। আগের সৃষ্টিশীলতা আর নেই।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, বাঙালি শাসক শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত ভ্রান্তি এবং প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপ এর কারণে একুশের চেতনা একটা পরিপূর্ণ জাতীয় চেতনার রূপে বিকশিত হতে পারেনি।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ১৯৪৮ সালে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তা পরিণতপর্বে প্রবেশ করে। ১৯৪৭ সালে একদিকে হিন্দুধর্মীয় পুনর্জীবনবাদ, অপরদিকে দ্বিজাতিতত্ত্ব ভিত্তিক জাতীয়তাবাদ আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তে ভারত পাকিস্তান নামে দু’টি রাষ্ট্র গড়ে ওঠে। সেই সময় আমরা পূর্ববঙ্গবাসীরা এক গভীর জাতি পরিচিতি সংকটে পতিত হই। কারণ আমরা সে-সময় না ভারতীয় না পাকিস্তানী কোনো জাতিরই অন্তর্ভূক্ত হতে পারিনি। ফলে পূর্ববঙ্গীয় জনগণ জাতিহীন একটি জনগোষ্ঠি হিসেবে অবস্থান করছিল।

তিনি আরও বলেন, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটা নতুন জাতীয় চেতনা গড়ে ওঠে এবং বিকশিত হয়ে ১৯৭১ সালে জাতীয় স্বাধীনতা ও মুক্তির লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি রাষ্ট্র রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।

খালেকুজ্জামান বলেন, বাঙালি জাতিস্বত্ত্বা থেকে বাঙালি জাতিতে উত্তীর্ণ হওয়ার সংগ্রামে অন্যান্য জাতিস্বত্ত্বা বা আদিবাসী যেমন; চাকমা, মারমা, ত্রিপুরী, সাঁওতাল, গারো ইত্যাদি সকলকে নিয়েই এই জাতি গঠিত হয়েছিল। কিন্তু বাঙালি শাসক শ্রেণির দৃষ্টিভঙ্গিগত ও আচরণগত ভ্রান্তি এবং প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপের কারণে এই চেতনা একটা পরিপূর্ণ জাতীয় চেতনার রুপে বিকশিত হতে পারেনি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি দ্য রিপোর্টকে বলেন, একুশ সংগ্রাম ও সৃষ্টিশীলতার প্রতীক। সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল চিন্তার সম্মিলিত প্রকাশ ঘটে একুশের মাধ্যমে। আজ সৃষ্টিশীল ও সৃজনশীল চিন্তার ক্ষেত্রগুলোকে সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা একুশের চেতনা থেকে মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। এর থেকে মুক্তির জন্য স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএম/এপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭)