পিরোজপুর প্রতিনিধি : ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য বিশ্বের বুকে প্রথম প্রাণ দিয়েছিল বাঙালি জাতি। এর ৪৭ বছর পর ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। এরপর ১৭ বছর অতিক্রম করে ১৮তে পা রাখলেও, সেই সকল ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে পিরোজপুরে আজও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। এর ফলে প্রতি বছর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অস্থায়ীভাবে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে দিবসটি উদযাপন করে চলছে।

তবে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে দাতা ব্যক্তিদের কল্যাণে কিংবা বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল অথবা বিদ্যালয় মেরামতের বরাদ্দ থেকে শহীদ মিনার নির্মাণ হলেও, অধিকাংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমনকি কলেজেও শহীদ মিনার নেই। এর ফলে ভাষা শহীদ দিবসে শিক্ষার্থীরা শহীদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না।

জেলার ইন্দুরকানি উপজেলার উত্তর চণ্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তামান্না জানায়, তাদের বিদ্যালয়ে কোন শহীদ মিনার নেই। তাদের বিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিনার স্থাপিত হলে খুবই ভালো হতো বলে জানায় সে।

বালিপাড়া ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ কবির হোসেন জানান, তাদের বিদ্যালয়ের আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে তারা তাদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি শহীদ মিনার স্থাপন করতে পারেন নাই।

তবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব উপলব্ধি করে অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করে দিচ্ছেন। এদের মধ্যে একজন ইন্দুরকানী উপজেলাধীন পঞ্চগ্রাম সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষা এবং ধারণ করার জন্য শহীদ মিনার হচ্ছে মূল প্রাণকেন্দ্র। এই উপলব্ধি থেকেই তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষকমণ্ডলী ও স্থানীয়দের সহায়তায় একটি শহীদ মিনার তৈরি করে দিচ্ছেন।

একই উপজেলার পত্তাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, তিনি তার পাঁচ বছর সময়ের মধ্যে প্রতি বছর তার ইউনিয়নে একটি করে শহীদ মিনার নির্মাণে সহায়তা করবেন।

পিরোজপুর আফতাবউদ্দিন কলেজের বাংলার সহকারী অধ্যাপক মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা পেয়েছে। তাই ভাষা শহীদদের সম্মানার্থে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠিত হয়নি, ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা উচিত।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭)