চট্টগ্রাম শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে হাতাহাতি
চট্টগ্রাম অফিস : একুশে ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে ধাক্কাধাক্কি ও মারামারিতে লিপ্ত হয়েছেন ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ নামের একটি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা পুরো শহীদ মিনার এলাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত ১২টা ০১ মিনিটে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার জন্য লাইনে থাকা অন্যান্য সংগঠনকে ডিঙ্গিয়ে শহীদ বেদীতে উঠে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’র নেতাকর্মীরা। এ সময় নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারিতে লিপ্ত হন তারা। প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরে এ ঘটনা চলতে থাকে। তাদের থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
পরবর্তীতে তাদেরকে জোর করে বেদী থেকে নামিয়ে দেওয়ার পরও দুই পক্ষ মারামারিতে লিপ্ত থাকে। এ সময় একে অন্যকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন তারা।
এ ব্যাপারে সিএমপি’র কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কার আগে কে ফুল দিবে তা নিয়ে হুড়োহুড়ি থেকে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছে ফুল দিতে আসা যুবকরা। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।’ সব সংগঠন শহীদ মিনারে শান্তিপূর্ণভাবে ফুল দিয়েছে বলে জানান তিনি।
যদিও একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির নেতারা পুলিশী হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসার পর নিচে আইনজীবীদের সাথে পুলিশের হঠাৎ উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা আইনজীবীদের লাঠি হাতে ধাওয়া দেয়।
শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘যারা ফুল দিতে এসেছেন তাদের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কিংবা মহান একুশে ফেব্রুয়ারির, ভাষা দিবসের, তাৎপর্য সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণেই এ পবিত্র স্থানে এসে তারা বিশৃঙ্খলা এবং মারামারি করেছেন।’ শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে সেলফি তোলাকে তিনি মানসিক রোগ বলে আখ্যায়িত করেন।
এদিকে, একুশের প্রথম প্রহরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন, বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ রুহুল আমিন, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ, সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার ও জেলা পুলিশ সুপার।
এ ছাড়া নগর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা, জাসদ, যুবলীগ ছাত্রলীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। পরে শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে সেখানে হাজারো মানুষের ঢল নামে। দলে দলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসতে থাকে ফুল হাতে। সর্বস্তরের মানুষের পদভারে জেগে উঠে স্মৃতির মিনার।
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭)