দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একুশের শিক্ষা মূলত ভাষাগত বৈচিত্র্যকে স্বীকার করে সবার মধ্যে একাত্মতা বোধ ও সহমর্মিতা সৃষ্টির শিক্ষা। বাংলাদেশ সেই মূল্যবোধকে বিশ্বে প্রসারিত করছে।

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০১৪ উদযাপন উপলক্ষে চার দিনব্যাপী সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। খবর বাসসের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ তার নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য ও সংগ্রামী চেতনা নিয়ে গণতান্ত্রিক ধারায় এগিয়ে যাবে। এ বিশ্বাস আমাদের সরকারের আছে এবং আমরা তা করব।

শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকে বাঙালিকে তাদের সকল ন্যায়সঙ্গত দাবি ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করতে হয়েছে। পশ্চিমা শাসকরা জানত, একটি জাতিসত্তাকে বিনাশ করতে হলে প্রথমে তার ভাষা এবং সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হবে। তাই প্রথম আঘাত আসে বাঙালির ভাষার ওপর। ১৯৫২ সালের এ দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে।

তিনি বলেন, আঘাত ছিল মূলত আমাদের জাতিসত্তার ওপর আঘাত, বাঙালি রাষ্ট্র ও বাংলা ভাষার ওপর আক্রমণ। এই অশুভ শক্তির সকল কূটকৌশল প্রতিহত করে তাদের চিরতরে বিনাশ করতে হবে।

একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কানাডা প্রবাসী বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও সালাম এবং মাতৃভাষা প্রেমিক গোষ্ঠীর সংগঠন ‘ভালবাসি মাতৃভাষা’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি প্রয়াত রফিকুল ইসলাসসহ সংশ্লিষ্টদের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।

বাংলাকে জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা করার উদ্যোগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে আমি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করেছি।’ এ ব্যাপারে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার জন্য বিশ্বের প্রতিটি বাঙালির প্রতি তিনি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা যাতে তাদের মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করতে পারে, সরকার ইতোমধ্যে সে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী মহান একুশে ফেব্রুয়ারিকে বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে রক্তে রাঙানো একটি গৌরবোজ্জ্বল দিন উল্লেখ করে বলেন, জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে বাঙালির একুশ আজ বিশ্বের ১৯৩টি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাই ভাষা-আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হওয়ার পর পৃথিবীর বিকাশমান ও বিলুপ্তপ্রায় ভাষাগুলোর মর্যাদা রক্ষা ও সেগুলোর বিকাশের লক্ষ্যে ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপন করার লক্ষ্যে ২০০১ সালের ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ইনস্টিটিউট ভবন নির্মাণের কাজও শুরু হয়। কিন্তু পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তা বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ ৯ বছর তা বন্ধ থাকে। ২০০৯ সালে তার দায়িত্ব নিয়ে পুনরায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের নির্মাণ কাজ শুরু করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট নতুন। ক্রমান্বয়ে এর একাডেমিক সুবিধাদি এবং ভৌত অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইনস্টিটিউটে ভাষা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে একে ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। আমাদের ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় প্রদত্ত ভাষণ এবং এশিয়া মহাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর ভাষিক পরিচয় জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম উন্নত ও শান্তির দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা পাবে বাংলাদেশ। বর্তমান সরকার সে লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে।

অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস, বাংলাদেশের এমিরিটাস প্রফেসর রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন শিক্ষা সচিব ড. মোহাম্মদ সাদিক এবং অতিথি ও অভ্যাগতদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তৃতা করেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জিনাত ইমতিয়াজ আলী।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সচিব ও শিক্ষাবিদগণ এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

(দ্য রিপোর্ট/বিকে/জেএম/শাহ/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৪)