মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি : এমপি বাদলকে বাদ দেওয়ার দাবি
চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে ‘অমুক্তিযোদ্ধা’ সংসদ সদস্য মাঈন উদ্দিন খান বাদলের পরিবর্তে একজন সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধাকে সভাপতি করে সঠিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই করার আহ্বান জানিয়েছেন বোয়ালখালীতে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কমান্ডারসহ মুক্তিযোদ্ধারা।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধকালীন সময়ে সংসদ সদস্য বাদল ও তার পরিবারের বিতর্কিত ভূমিকার চিত্র তুলে ধরে এ দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা ‘অমুক্তিযোদ্ধাদের’ মুক্তিযোদ্ধা করার ষড়যন্ত্র প্রতিহিত করারও দাবি জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে যুদ্ধকালীন কোম্পানি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আবুল বশর বলেছেন-
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত বর্তমান সরকার ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়নে ইতোমধ্যে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ জন্য আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ও দেশবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ। মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা রক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে একটি সঠিক মুক্তিযোদ্ধ তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে প্রতি উপজেলার জন্য একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে সভাপতি করা হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য, সদস্য সচিব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন-জামুকা’র প্রতিনিধি ১ জন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিনিধি ১ জন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ২ জন। এই ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন।
যে এলাকার সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নয়, সে উপজেলায় যাচাই-বাছাই কমিটিতে সংসদ সদস্যের পরিবর্তে অন্য কোনো স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধাকে সভাপতির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়ে থাকে।
বোয়ালখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিতে অমুক্তিযোদ্ধা সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি’কে সভাপতি মনোনয়ন প্রদান করায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ হতে আমরা মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ও চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে ইতোপূর্বে আপত্তি জানিয়েছি। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সমন্বয় সভাতেও বোয়ালখালীর মুক্তিযোদ্ধারা আপত্তি জানান। এ সভায় সংসদ সদস্য মাঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি উপস্থিত ছিলেন। ঐ সভায় তিনি নিজেও স্বীকার করেন যে, বোয়ালখালীতে মুক্তিযুদ্ধের কার্যক্রমে তিনি কোনোভাবেই অংশগ্রহণ করেননি। তার এ বক্তব্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
বিগত ২৮ জানুয়ারি বোয়ালখালীতে সঠিক মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। সংসদ সদস্য মাঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি’র সভাপতিত্বে উক্ত যাচাই-বাছাই কার্যকম শুরু হলে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। দীর্ঘক্ষণ এ নিয়ে উপজেলা মিলনায়তন ও চত্বরে বিক্ষোভ প্রতিবাদের মুখে উক্ত যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পরিত্যক্ত হয়।
বোয়ালখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম ত্রুটিমুক্ত করার জন্য কমিটির সভাপতি পদে অমুক্তিযোদ্ধা মাঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি’র পরিবর্তে একজন যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধাকে সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করে কমিটি পুনর্গঠন করে সঠিকভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আবেদন জানিয়ে যুদ্ধকালীন কমান্ডার মোহাম্মদ সোলায়মান ও কোম্পানি কমান্ডার এম এ বশরের নেতৃত্বে বোয়ালখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত অভিভাবক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এমপি’কে এ সম্পর্কে অবগত করি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও জামুকার মহাপরিচালকের সাথে আলাপ করে আমাদের আশ্বস্ত করেন যে, অমুক্তিযোদ্ধা সভাপতির পরিবর্তে তিনি নিজেই দায়িত্ব নিয়ে বোয়ালখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করবেন।
আমাদের আবেদন ইতোমধ্যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এমপি, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, বোয়ালখালীর কৃতী সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন আহমদকে এ সম্পর্কে অবহিত করেছি। তারাও আমাদের আবেদনে বর্ণিত দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি বোয়ালখালীতে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম পুনরায় শুরু হচ্ছে। বিগত ৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনলাইনে প্রকাশিত বোয়ালখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির তালিকায় সভাপতি হিসেবে মাঈন উদ্দিন খান বাদলের নাম প্রত্যাহর করে সভাপতি পদ শূন্য রাখা হয়।
কিন্তু বোয়ালখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মাহবুব আলম (যিনি ইতোমধ্যে বদলি হয়েছেন) কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি পত্রে মাঈন উদ্দিন খান বাদল এমপিকে বোয়ালখালী মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি উল্লেখ করে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি হতে যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু করার কর্মসূচি ঘোষণা করে সংশ্লিষ্টদের নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় একজন অমুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্বে পুনরায় বোয়ালখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম শুরু একটি বিশেষ গোষ্ঠীর অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার উদ্যোগ। যা বোয়ালখালী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। আমাদের আশংকা, সরকারের একটি সদিচ্ছা, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কার্যক্রম, বানচাল করতে এ অশুভ তৎপরতা পুনরায় শুরু করা হয়েছে।
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সঠিক যাচাই-বাছাইয়ের বাস্তব প্রয়োজনে আমরা একজন অমুক্তিযোদ্ধা মাঈন উদ্দিন খান বাদল এমপি’র পরিবর্তে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্বে বোয়ালখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি পুনর্গঠনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-মুক্তিযুদ্ধকালীন বোয়ালখালীর কমান্ডার মোহাম্মদ সোলায়মান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কমান্ডার আবুল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ সুনীল চক্রবর্ত্তী, কমান্ডার আবদুল লতিফ, কমান্ডার মো. ইদ্রিস, কমান্ডার নজরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা উদয়ন নাগ, মুক্তিযোদ্ধা প্রশান্ত বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা এস এম ইসহাক ভান্ডারী, মুক্তিযোদ্ধা আয়ুব খান, মুক্তিযোদ্ধা সুশীল চক্রবর্ত্তী, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শফি, মুক্তিযোদ্ধা সামশুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা আলী রেজা, মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ, মুক্তিযোদ্ধা মো. নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭)