‘জানার জন্য একটা জীবন বড়ই ছোট’
মাহরীন ফেরদৌসের লেখালেখির সূচনা ব্লগিংয়ের মাধ্যমে। লিখেন একুয়া রেজিয়া নামে। স্বাধীনচেতা ও অন্যমনা এই লেখিকা একটি প্রাইভেট ফার্মে কর্মরত আছেন। গত বছর অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয় ছোটগল্প সঙ্কলন ‘নগরের বিস্মৃত আঁধার’। দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছেন ওয়াহিদ সুজন
এবার কী কী বই বের হলো।
এ বছর অমর একুশে বইমেলায় আমার লেখা দ্বিতীয় বই, প্রথম উপন্যাস ‘কিছু বিষাদ হোক পাখি’ প্রকাশিত হয়েছে অন্যপ্রকাশ থেকে। চতুর্মাত্রিক ব্লগ সঙ্কলনে আমার লেখা গল্প প্রকাশিত হচ্ছে শুদ্ধস্বর থেকে।
বই সম্পর্কে বলুন...
শত সহস্র বছর ধরে পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য মানুষ। পৃথিবীতে মানুষের জন্ম যেমন আলোকিত ঘটনা, তেমনি মৃত্যু হচ্ছে অন্ধকারময়। জন্ম ও মৃত্যুর এই প্রকৃতিগত খেলার মাঝেই বসবাস বিশ্বের লাখ-কোটি মানুষের। স্থলভাগের নানা সমাজে উপস্থিত এমন সহস্রাধিক চরিত্রের এক প্রতিনিধির নাম সঞ্জনা। ‘কিছু বিষাদ হোক পাখি’ বইটি মূলত সঞ্জনা নামের এক চরিত্রের গল্প। তবে কয়েক চরিত্রের পুরো জীবনের গল্পও।
বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা কেমন।
বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা ভালো-মন্দ উভয়ই। আমাদের দেশে নবীন লেখকদের বই প্রকাশের জন্য যথেষ্ট কষ্ট ও পরিশ্রম করতে হয়। আমাকেও করতে হয়েছে। তবে বই প্রকাশের পর যে আনন্দের অনুভূতি হয়, তা অন্য যে কোনো অনুভূতির চেয়ে তুলনাহীন।
বইকে কীভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
আমার মনে হয় বইকে প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে পাঠাগার তৈরি করতে হবে। পাঠকশ্রেণী ও পাঠচক্র তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশে বইপড়ুয়া বেশ কম। বাইরের দেশগুলোতে দেখা যায় বাসে, ট্রেনে, লাইব্রেরিতে, কফিশপে মানুষ বই পড়ছে। আমাদের দেশে বইমেলা ছাড়া মানুষ বই কিনে বা পড়ে খুবই কম। এ ব্যাপারটা বদলে ফেলতে হবে সবার আগে। বই পড়া, নতুন কিছু জানতে থাকাও একটা চর্চার ব্যাপার। সাধনার ব্যাপার।
বই কেনার পরিকল্পনা নিয়ে বলুন।
সুপরিচিত ও বিখ্যাত লেখকদের বিখ্যাত বইগুলো তো আমি সারা বছর নানা বইয়ের দোকানে পাব এবং কিনবও। তাই ঠিক করেছি এবার বেশিরভাগ বই কিনব নবীন লেখকদের। কারণ বইমেলা ছাড়া নবীন লেখকদের বই প্রচারের মাধ্যম খুবই সীমিত।
বইমেলার স্থান সম্প্রসারণ কীভাবে দেখছেন।
সেই ছেলেবেলা থেকেই বাংলা একাডেমিতে বইমেলা দেখে অভ্যস্ত হয়ে আছি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা দেখলে আপন মনে হয়। এবার বইমেলা আগের চেয়ে সম্প্রসারিত হয়েছে দেখে কিছুটা ভিন্ন ধরনের অনুভূতি হচ্ছে। তবে এটাও বুঝতে পারি বইমেলা বড় হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ আসছে, প্রকাশনীর সংখ্যা বাড়ছে, লেখক বাড়ছে, ভালোমানের লেখা আসছে, আজ বাদে কাল এই স্থান সম্প্রসারণের বিষয়টি ঘটতই।
লেখালেখির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করলে আসলে লেখালেখি কতটুকু সফল হয় আমি তা জানি না। লেখালেখিকে আমি শ্রেষ্ঠ কাজ মনে করি। সাধনা মনে করি। একটা ভালো লেখা লিখতে হলে অনেক কিছু জানতে হয়, বুঝতে হয়, অনুভব করতে হয়। শেখার কোনোই শেষ নেই। তাই শিখে যেতে চাই ও সাধনা করে যেতে চাই। মাঝে মাঝে শুধু মন খারাপ হয়, এই পৃথিবীর সব বই পড়ে ফেলার জন্য, সব কিছু জানার জন্য একটা জীবন বড়ই ছোট।