অবরোধই বিএনপির শেষ অস্ত্র!
তারেক সালমান, দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে অবরোধ ঘেরাও কর্মসূচি শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায় বিএনপি। ১৮ দলীয় জোটের একাধিক সিনিয়র পর্যায়ের নেতার সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ৩১ অক্টোবর রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়। বৈঠকে জোটের অধিকাংশ নেতাই গেল সপ্তাহের (২৭, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর) ‘সফল’ টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের পর চলতি সপ্তাহে তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচির পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের শেষ মেয়াদে রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণে নানা কৌশল অবলম্বন করছেন জোটের শীর্ষ নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য ও জোটের শীর্ষ নেতারা অবরোধের পক্ষে অবস্থান নিলেও তা ঘোষিত হয়নি।
জানা গেছে, ৩১ অক্টোবর রাতে ওই বৈঠকে স্থায়ী কমিটি ও জোট নেতাদের মতামতে খালেদা জিয়াও দেশব্যাপী অবরোধের পক্ষে অবস্থান নেন। কিন্তু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম তরিকুল ইসলামের পরামর্শে তিনি (খালেদা) তার অবস্থান থেকে সরে আসেন।
তরিকুল ইসলাম তার দলীয় প্রধানকে এই মুহুর্তেই অবরোধ কর্মসূচি না দিতে পরামর্শ দেন বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই নেতা জানান, তরিকুল ইসলাম বিএনপি নেত্রীকে বলেছিলেন, রাজনৈতিক আন্দোলনে হরতাল, ঘেরাও ও অবরোধ হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন ও শক্ত কর্মসূচি। এই মুহুর্তে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি অবরোধ ঘেরাও কর্মসূচি পালনের মতো অবস্থানে নেই।
তরিকুল আরও বলেছিলেন, এজন্য নেতাকর্মীদের ‘মোটিভেট’ করার আগেই হঠাৎ করে অবরোধের মতো আন্দোলনের শেষ ‘অস্ত্র’টি বিফল হয়ে যায়, তাহলে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো কঠিন হয়ে যাবে।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রবীণ এই বিএনপি নেতার পরামর্শে দলীয় চেয়ারপারসন শেষ পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি থেকে সরে এসে ৬০ ঘণ্টা হরতালের কথা জানিয়ে দেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে।
সূত্রে জানা গেছে, দলীয় প্রধানের নির্দেশের পর ২ নভেম্বর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচির কথা সাংবাদিকদের জানান।
তবে ওই দিন মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নিলে বিএনপি ও তার জোট অবরোধ ও ঘেরাও কর্মসূচির দিকে যাবে।
সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা স্বীকার না করলেও ওই নেতারা জানান, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের গুরুত্বের কারণেই মূলত: তারা অবরোধ কর্মসূচিতে যাননি। অবরোধ কর্মসূচির মাধ্যমে সারাদেশকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলার পর সেই আন্দোলনে কোনভাবেই ‘ছেদ’ ফেলানো যাবে না। কিন্তু শুধু বিএনপির কাছে নয়, পুরো দেশের কাছেই ৭ নভেম্বরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিহার্য। ৭ নভেম্বর যথাযোগ্য মর্যাদায় বিএনপি পালন করবে।
হরতাল কর্মসূচিতে সরকার দাবি মেনে না নিলে ১৮ দলীয় জোট ঘেরাও, অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচিতে যাবে বলে দি রিপোর্ট ২৪ কে জানান জোটের অন্যতম নেতা বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি বলেন, ঘেরাও, অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচি নিয়ে জোটের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে বিএনপির নীতি নির্ধারকগণ ও জোটের শীর্ষ নেতারাও তাকে মতামত দিয়েছেন। সাংগঠনিক শক্তির বিষয় ছাড়াও ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসকে সামনে রেখে ঘেরাও, অবরোধ কর্মসূচি দেয়া হয়নি বলে আমার মনে হয়। কারণ অবরোধের মতো কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করার পর দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনোক্রমেই আর বিরতি দেয়া সম্ভব না। তবে দ্বিতীয় দফা টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের পর বেগম জিয়া সেই কর্মসূচি শিগগিরিই ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে এখন থেকে লাগাতার কর্মসূচি দেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। হরতাল ছাড়াও সরকারের প্রশাসনযন্ত্র অচল করার লক্ষে প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকদের কার্যালয় ঘেরাও, ঢাকায় সচিবালয় ঘেরাও ও রাজধানী ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি থাকতে পারে। আর শেষ ‘অস্ত্র’ হিসেবে তারা ব্যবহার করবে ‘অবরোধ’। সেই অবরোধের মাধ্যমে সারাদেশকে ঢাকা থেকে কার্যত ‘বিচ্ছিন্ন’ করে ফেলতে চায় ১৮ দলীয় জোট।
(দিরিপোর্ট২৪/টিএস/এসবি/এমডি/নভেম্বর ০৬, ২০১৩)