‘হতে চাই বৃত্ত ভাঙার তাড়নায় নিরন্তর নিরীক্ষামুখর’
চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত লিটলম্যাগ ‘তৃতীয় চোখ’ ১৪ বছর পার করছে। কবি আলী প্রয়াসের সম্পাদনায় মেলায় কাগজটির নতুন সংখ্যা এসেছে। দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে মুখোমুখি হয়েছেন ওয়াহিদ সুজন।
মেলায় ‘তৃতীয়চোখ’ এর কততম সংখ্যা প্রকাশ হলো।
চর্তুথ সংখ্যা।
কাগজটির বয়স তো কম নয় কিন্তু সংখ্যা এতো কম…
কম কিংবা দীর্ঘ বিরতির কোনো অজুহাত নেই। ছোটকাগজ প্রেমিক মাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন কেমন করে একটি ছোটকাগজ প্রকাশিত হয়। তবুও বলতে দ্বিধা নেই অমনযোগিতা, কর্মব্যস্ততা, প্রান্তিক শহরে জীবন যাপন অথবা বলা যায় নতুন কোনো পাঠ অভিজ্ঞতার সন্ধান- এ সব মিলিয়ে করা হয়ে ওঠেনি।
সংখ্যাটি কীধরনের লেখা এবং কাদের লেখা দিয়ে সাজানো হয়েছে।
এ সংখ্যায় দেশের তরুণ প্রতিভাবান লেখকদের গল্প, কবিতার পাশাপাশি আছে বাংলা সাহিত্যের দুজন প্রথিতযশা সাহিত্যিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ ও কমলকুমার মজুমদারের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বিশেষ স্মরণপর্ব। আছে নব্বই দশকের নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ অথচ শক্তিমান গল্পকার খোকন কায়সারের স্বাক্ষাৎকার ও তার লেখার ওপর বিশেষ প্রবন্ধ। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের এ সময়ের প্রতিনিধিত্বশীল ৫ জন কবির অনুবাদ কবিতা। কবি চন্দন চৌধুরী’র কবিতার পাণ্ডুলিপিসহ আছে সদ্য প্রয়াত কবি মাসউদ শাফি’কে নিয়ে বিশেষ ক্রোড়পত্র। আমি মনে করি ‘তৃতীয় চোখ’ এর এ সংখ্যা বেশ গুরুত্বপূর্ণ- যা পাঠককে ভিন্নরকম পাঠ অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম।
লিটলম্যাগতো একটি আন্দোলন, এই আন্দোলনের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বলুন।
সাহিত্যে ভিন্নমাত্রিক সৃষ্টি প্রেরণার অনিন্দ্য উৎস ছোটকাগজ। প্রতিষ্ঠান কিংবা প্রথাগত চিন্তার বিপরীতে গিয়ে নিঃসন্দেহে এটি একটি আন্দোলনই। ‘তৃতীয় চোখ’ তারই যোগসূত্রের অন্যতম নাম। স্মর্তব্য যে, বাংলাদেশে লিটলম্যাগ আন্দোলনের ইতিহাস অনুজ্জ্বল নয়। তারই ধারাবাহিকতায় এ আন্দোলন এখনও অব্যাহত আছে। তবে বলা যায়, পূর্ব দশকগুলোর লিটলম্যাগ সম্পাদকরা আয়োজন ক্ষুদ্র ও কলেবর ছোট করলেও তারা যে পরিশ্রম, সাধনা, নতুন নতুন ভাবনা চিন্তা, আবিষ্কার ও অভিজ্ঞতা নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির করত তা এখন পরিলক্ষিত হয়না।
বর্তমান সময়ে অনেক বড় বড় সংখ্যা হচ্ছে বটে কিন্তু এতে নিরীক্ষার ছাপ কম। ছাপার মান ভালো কিন্তু কাজের মান অনেকাংশে উল্লেখ করার মতো নয়। কলকাতায় একেকজন সাহিত্যিককে নিয়ে একেক সংখ্যায় যে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে বাংলাদেশের লিটলম্যাগ সে তুলনায় পিছিয়ে। আমরা লিটলম্যাগ আন্দোলনটাকে পুরোপুরি সফলভাবে জাগিয়ে তুলতে পারিনি। এখনও লিটলম্যাগকেন্দ্রিক লেখক-প্রকাশক-কর্মীবান্ধব ভাববলয় গড়ে উঠেনি। তারপরও যে কিছু কাজ হয়নি এমন বলা অমুলক। তবু দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা রাখি, এ দেশের তরুণ সাহিত্যকর্মীরাই এই ভাববলয় তৈরিতে কিংবা লিটলম্যাগ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা চালিয়ে যাবেন।
বই মেলার স্থান সম্প্রসারণের বিষয়টি কিভাবে দেখছেন।
অমর একুশের গ্রন্থমেলাকে ঘিরে যে ঐতিহ্য তৈরি হয়েছে তা ঐতিহাসিকভাবে বেশ গুরুত্ব বহন করে। এ মেলা সৃষ্টিশীল মানুষের পীঠস্থানে পরিণত হয়েছে। সময়ের চাহিদার কারণে মেলার সম্প্রসারণ কিংবা আদলের পরিবর্তন আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়, বরং এটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এবং জরুরি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মেলার সম্প্রসারণের পক্ষে কিন্তু মেলাকে দ্বিখণ্ডিতকরণের পক্ষে নয়। মেলার প্রকাশকদের সব স্টল এক জায়গায় হওয়া উচিত। বাংলা একাডেমি অংশে কেবল সভা-সেমিনার উদ্বোধনসহ আনুষ্ঠানিকতাগুলো রেখে বাকি সকল আয়োজন সোহরাওয়ার্দীতে রাখলে ভালো হত। এখন অভ্যাগতরা বিভ্রান্ত হচ্ছে ও এক পাশে ঘোরা শেষ হলে অন্য পাশে যাওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছে।
আরেকটা বিষয় বলাবাহুল্য, মেলায় কেবল বইকেন্দ্রিক প্রকাশক ছাড়া অন্যান্য অনেক অপ্রয়োজনীয় স্টলগুলোকে অনুমোদন না দেয়াই শ্রেয়। একইসঙ্গে মেলাকে বছরজুড়ে দেশব্যাপী বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়টিও ভাবা যেতে পারে।
‘তৃতীয় চোখ’ নিয়ে সামনের পরিকল্পনা কী।
মুক্তচিন্তার বর্ণসমগ্র দিয়ে সাজানো সৃজনশীল চেতনার নান্দনিক পদক্ষেপে চলতে চলতে চর্তুদশ বর্ষে পা রাখল ‘তৃতীয় চোখ’। আগামী বছর এর পঞ্চদশ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে থাকবে বেশ বড়সড় ও গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন। কী থাকবে তা আপাতত না বলে বলতে চাই শিল্পের শুদ্ধতম পথরেখায় ‘তৃতীয় চোখ’ রেখে যেতে চায় প্রাগ্রসর চিন্তার সহগামী চিহ্ন কিংবা বিপ্রতীপ ভাবনার নান্দনিক প্রবর্তনা। আমরা হতে চাই বৃত্ত ভাঙার তাড়নায় নিরন্তর নিরীক্ষামুখর…