দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : আইনজীবীরা যথাযথ ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে না এলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা টিকবে না এবং একদিন তা বিলীন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। বুধবার (০১ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলএলএম ল’ইয়ার্স এসোসিয়েশন আয়োজিত বাসন্তী উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা যদি এটা মেনে নেন আসামিদের জামিন, কোন দেওয়ানি মামলায় নিষেধাজ্ঞা বা স্থগিতাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব, তাহলে কিন্তু শাসনতন্ত্র, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোনটাই টিকবে না। একদিন সব বিলীন হয়ে যাবে।’

আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় আইনজীবীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আপনারা এগিয়ে আসবেন। কেন প্রধান বিচারপতি শুধু বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বলবে এখানে আইনের শাসন হচ্ছে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হচ্ছে না, বিচারকদের জন্য রুলস হচ্ছে না। এগুলো কেন প্রধান বিচারপতি বলবে? আজ পর্যন্ত তো কোনো আইনজীবীর মুখে কোন মিডিয়ায় আমি শুনতে পারলাম না এটা ঠিক হচ্ছে না। আপনারা যদি বিজ্ঞ আইনজীবী হিসেবে থাকতে চান, প্রথমে আমাদের দেশের কোর্ট-কাচারি যেগুলো আছে এগুলো রক্ষা করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যতদূর হয়েছে এটা রক্ষা করতে হবে।’

বার কাউন্সিলের বর্তমান অবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আগে বার কাউন্সিল ভালো ভূমিকা নিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি শুধু ইঙ্গিত দিয়েছিল, এর পরে সেই প্রজ্ঞাপন পর্যন্ত বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু আজকে তা কোথায়? নেই বার কাউন্সিল, নেই সুপ্রিম কোর্ট বার।’

বিচার বিভাগে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে স্বীকার করলেও তার জন্য আইনজীবীদেরই অনেকাংশে দায় দিলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগের কিছু ইনকনসিসটেন্স (অসঙ্গতি) আছে, এটার জন্য অনেকাংশে দায়ী আইনজীবীরা। আমরা বিচার করি, বিজ্ঞ আইনজীবীরা আইনের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। এ ধরনের ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো খুব কম আইনজীবী পাই।’

বন্ধের সময় আদালতের জায়গা দখল হয়ে যায় উল্লেখ করে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দেখি কোর্ট বন্ধকালীন সময় কোর্টের খালি জায়গায় রাতারাতি বিল্ডিং উঠে গেলো। প্রত্যেক জেলায় জেলায় এ অবস্থা। একটা জেলায় ২ একর কোর্টের জায়গায় বার দখল করে নিয়েছে। এই আইন পেশা যদি না থাকে এই কোর্ট যদি না থাকে তাহলে কীরকম হবে। আমি শুধু আপনাদের কাছে এটা দায়িত্ব দিয়ে গেলাম।’

রাষ্ট্রকে আগে মানতে হবে, তাহলে অন্যরাও আইন মানবে বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘আইন ও শাসনতন্ত্র প্রথমে রাষ্ট্রকে বজায় রাখতে হবে। মেনে চলতে হবে। এর পরে বলতে হবে আমি আইন মানবো, আপনারা আইন মানেন। আমি আইন মানবো না, আর আমি যদি বলি আপনারা মানেন তাহলে সেই রাষ্ট্র কোনভাবেই চলবে না।’

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আলী আহমেদ খোকনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ কে এম আব্দুল হাকিম, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি এম আর হাসান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এসএম মুনীর প্রমুখ।

আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান করেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী আব্দুল জব্বার, কুমার বিশ্বজিৎ, রোমানা ইসলাম, রন্টি দাস।

(দ্য রিপোর্ট/কেআই/এপি/এনআই/মার্চ ০১, ২০১৭)