দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সচিবালয়ে সোমবার (৬ মার্চ) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তথ্যমন্ত্রী এ কথা জানান।

গত ৩ মার্চ রাতে প্রকাশিত ২০১৬ সালের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর বলেছে, সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বেআইনি আটক ও গুমের মতো ঘটনা বাংলাদেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথিবীর সকল দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর প্রতি বছর তাদের পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখার বিষয়ে তাদের চশমাটা ভুল চশমা এবং দেখার চোখটাও ঝাপসা। অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢালাও মন্তব্য প্রদান আমরা বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সমর্থন করি না।’

ইনু বলেন, ‘সর্বশেষ ২০১৬ সালের উপর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আমরা তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ তা যথাযথ তথ্যনির্ভর নয়।’

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধান ও আইন দ্বারা পরিচালিত একটি দেশ, দেশের সব সংস্থা। সংবিধান ও আইনের পাশাপাশি সংস্থার নিজস্ব সংবিধিবদ্ধ বিধি-বিধান ও নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। সুতরাং আইন বহির্ভূত কোন কাজ করার সুযোগ সরকারের নেই। কোন সংস্থারও নেই। কোথাও এর ব্যত্যয় হলে এর আইনি প্রতিকার পাওয়ার ব্যবস্থাও সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত।’

তথ্যমন্ত্রী প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে সরকারের পক্ষে ব্যাখ্যা দেন।

হাসানুল হক বলেন, ‘প্রতিবেদনে তারা এক জায়গায় বলেছে, বাংলাদেশে যে জঙ্গি ও সন্ত্রাসের তৎপরতা আছে, তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পর্ক আছে। তারা এটাও বলেছে, গত এক বছরে তাদের তৎপরতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।’

এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে ধর্মীয় জঙ্গি, সন্ত্রাসী, উগ্রবাদীরা বাংলাদেশের মাটিতে গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মাটিতেই তারা তৎপর। এই সংগঠনগুলো যাই বলার চেষ্টা করুক না কেন, আজ পর্যন্ত গ্রেফতারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য, তদন্ত, আদালতের বিচার-কোন জায়গায়ই এই সব সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের সম্পর্কে প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘সুতরাং মার্কিনিদের রিপোর্টের সঙ্গে এটা যায় না। তাদের প্রশংসা করা উচিত ছিল যে, বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত আক্রমণ হলেও তারা প্রতিহত ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকায় গত এক বছরে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের যে ঘটনা ঘটেছে, তার চেয়ে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা অনেক বেশি সফল।’

সাধারণ মানুষের অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার সংকুচিত করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনের বক্তব্য সঠিক নয় জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখানে এই অধিকারে আইনগতভাবে কোন বাধা গত এক বছরে দেওয়া হয়নি। জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে কোন রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আমরা সংকুচিত করিনি। প্রশাসনিক কোন নির্দেশও দেইনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সংবিধানের আওতায় কষ্ট হলেও জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনের চেষ্টা চালাচ্ছি। যেমন ভারত ইউরোপ ও আমেরিকা চালাচ্ছে। সুতরাং এখানে মানবাধিকার ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার সংকুচিত করার অভিযোগ সত্য নয়।’

জাসদ সভাপতি ইনু আরও বলেন, ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়েও তারা কথা বলেছে। আমি বলছি, বাংলাদেশে আইনগতভাবে কোন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিচারবহির্ভূত কোন হত্যা করার কোন আইনগত বিধান বাংলাদেশে নাই। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে যারা নিহত হয়েছে, তা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসাবে চালানোর প্রয়াস সঠিক নয়।’

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এস/এপি/মার্চ ০৬, ২০১৭)