দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:  শ্রেণিকক্ষে ‘অশ্লীল চিত্র’ দেখানোর অভিযোগ তুলে এবং অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক রিয়াজুল হককে কোন ধরনের নোটিশ না জানিয়ে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মানবন্ধনের ডাক দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

শুক্রবার (১০ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে এ মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ ) গণমাধ্যমে পাঠনো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু প্রণীত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্যা ঢাকা ইউনিভার্সিটি অর্ডার, ১৯৭৩, (রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১৯৭৩ এর ১১), আইন ৫৬, সেকশন(৩)-এ রয়েছে কেবলমাত্র নৈতিক অবক্ষয় অথবা অদক্ষতার ভিত্তিতে একজন শিক্ষক বা কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা যেতে পারে। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তির বাছাই করা একজন প্রতিনিধিযুক্ত 'তদন্ত কমিটি' নৈতিক অবক্ষয় বা অদক্ষতার অভিযোগটির তদন্ত সম্পন্ন করার আগে ওই শিক্ষক বা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা যাবে না।’ এখন প্রশ্ন হলো, গঠিত তদন্ত কমিটিতে ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের প্রতিনিধি কে? অভিযোগ গঠনের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে আইন অনুসৃত না হলে কথিত 'তদন্ত কমিটি' অবৈধ বলেই বিবেচিত হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের প্রতিনিধি মনোনয়নের অধিকার আইন দ্বারা সুরক্ষিত। অথচ ওই কমিটিতে ড. রিয়াজের কোন প্রতিনিধি নেই আর তাই এটি অবৈধ। তাই প্রথমত তদন্ত কমিটির গঠনতান্ত্রিক বৈধতা কি, কি কারণে বরখাস্ত করা হলো তা না জানানো, বিভাগের একাডেমিক কমিটিকে না জানানো, ভিত্তিহীন অভিযোগ ও ভবিষ্যতে নোটিশবিহীন ড. রিয়াজকে স্থায়ী বরখাস্তের সম্ভাবনার কারণে ছাত্রসমাজ শংকিত। অভিযোগহীন, অনিয়মিত সান্ধ্যকালীন কোর্সের ছাত্রদের অভিযোগে নিয়মিত শিক্ষক বরখাস্ত করার ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে ছাত্রসমাজ বদ্ধপরিকর।

বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, ‘বিগত প্রায় এক দশক ধরে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ রিয়াজুল হক জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট স্টাডিজ কোর্স পড়াচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সকল প্রখ্যাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই কোর্সটির সাথে সর্ম্পকিত অনেক বিষয় যেমন লিঙ্গ বৈষম্য, নারী, ভাষা রাজনীতি ও নারী অধিকার, ধর্ষণ, গর্ভপাত ও নারী নির্যাতনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি আলোচনা করে থাকেন। কোর্সটিকে বিষয়কে সহজভাবে বোঝানোর জন্য কোর্স সর্ম্পকিত ভিজুয়্যাল প্রেজেন্টেশন ও সংশ্লিষ্ট অনেক ছবি ব্যবহার করা হয়। শ্রেণিকক্ষে ব্যবহৃত কিছু ছবিকে হাতিয়ার বানিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ও ভুল ব্যাখা দিয়ে অশ্লীল বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অভিযুক্ত শিক্ষককে কোনরকম পূর্বসতর্কতা না জানিয়ে বিভাগের কতিপয় শিক্ষক তার পড়ানো স্লাইডগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট পাঠিয়েছে। বিভাগের কতিপয় শিক্ষকের এ ভিত্তিহীন অভিযোগের আলোকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হককে সাময়িক বরখাস্ত আদেশ দেন, যা পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যম থেকে তিনি জানতে পারেন। অথচ সাময়িক বরখাস্ত আদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজে উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রিয়াজুল হককে জানানোর কথা। অবশেষে তিনি এ সাময়িক বরখাস্তের আদেশ পেলেন গত ৮ মার্চ। কিন্তু তাতে উল্লেখ নেই ঠিক কী কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘শুধু তাই নয় অশ্লীল ছবি দেখানোর যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তাও অনেকাংশ সত্য নয়। কারণ সান্ধ্যকালীন কোর্সের এমডিএস ব্যাচ (বাংলাদেশ ব্যাংকের) গতবছর বিদায়ের সময় স্মারকে রবীন্দ্রাথের রুপার পয়সা স্মৃতিস্মারক হিসেবে উপহার দিয়েছে। অন্যদিকে এ অভিযোগ বিভাগের একাডেমিক কমিটিকে না জানিয়ে, ড. রিয়াজুল হককে কোন প্রকার সর্তক না করে, সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ঐ ব্যাচের মাত্র দু’জন শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযোগ পত্র উত্থাপন করে রিয়াজুল হককে সাময়িক বহিষ্কার প্রদান করার আদেশ দেয়া হয়।’

(দ্য রিপোর্ট/এন/মার্চ ০৯, ২০১৭)