আমাদের বেশি বেশি টোয়েন্টি২০ খেলা উচিৎ : মুশফিক
দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : হারের কোনো ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চাননি দারুণভাবে সিরিজ শেষ করা বাংলাদেশ অধিনায়ক। বরং যুক্তি খণ্ডণ করে মুশফিকুর রহিম বলেছেন, আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী বল করতে পারিনি। পাওয়ার প্লেতে যে রান দিয়েছি সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুব কঠিন ছিল।’ হয়েছেও তাই। রান-বলের হিসাব কষাকষিতে মনে হয়েছে জিততে পারে বাংলাদেশ। কারণ টোয়েন্টি২০ ক্রিকেটে অনেক কিছুই সম্ভব। সম্ভব শেষ ওভারে ২২ রানও। তবে কম টোয়েন্টি২০ ম্যাচ খেলাকেও হারের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জিততে হলে আরো বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে হবে।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে কোনো বিব্রত পরস্থিতিতে পড়তে হয়নি মুশফিকুর রহিমকে। তাই বলেছেন ঠিকঠাক নিজের মতো। হারের কারণ হিসেবে বলেছেন, আমার মনে ২০ রান আমরা বেশি দিয়েছি। ওদের রান ১৮০ হলে খেলাটা ভিন্ন রকম হতে পারত। টোয়েন্টি২০ ফরম্যাটে এখনো অনেক জায়গা আছে যেখানে আমাদের উন্নতি করা দরকার। আশাকরি ভবিষ্যতে আমরা আরো টোয়েন্টি২০ ম্যাচ খেলতে পারবো। আপনি আশা করতে পারেন না ৪-৫ মাস পর পর একটা দুইটা টোয়েন্টি২০ ম্যাচ খেলবেন আর জিতে যাবেন। এ নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। আশা কারি সামনে তা কাজে লাগাতে পারবো।’
নিজদের ব্যাটিং সম্পর্কে বলেছেন, আমি অস্বাভাবিক ব্যাটিংই বলব। পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর অন্য কোনো দল চাইবে না ৬ ওভারে ৮০ বা ৭৬ রান করতে। এটা নিয়মিত করা সম্ভব না। আমাদের উন্নতির অনেক জায়গা আছে। খেলাটা আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না; কিভাবে খেলবো।’ ওদের ব্যাটিংয়ের কথা উল্লেখ করে যোগ করেছেন, দেখেন ওরা যে খুব ধুম ধাড়াক্কা মেরেছে তা কিন্তু নয়। হিসেবী এবং ঠান্ডা মাথায় খেলেছে। যত আমরা খেলবো আমাদের তত হবে। কিন্তু আমাদের খেলার সুযোগটা তো দিতে হবে। আপনি প্রতি বছর যদি একটা দুইটা টোয়েন্টি২০ খেলেন কখনোই শিখবেন না।’
পাওয়ার প্লে নিয়ে মুশফিকের ভাষ্য, পাওয়ার প্লেতে আমরা যে ব্যাটিং করেছি তা টোয়েন্টি২০ ব্যাটিং নয়। ৩ উইকেট পড়ার পর অন্ধের মতো প্রতিটি বল চালাতে থাকবো এটা তো আমার বা নাঈম ভাইয়ের বা আমাদের কোনো ব্যাটসম্যানের নেচার না। আমাদের প্রয়োজনীয়তা এমন ছিল পাওয়ার প্লেতে যত বেশি রান করা যায়। এমন খেললে আমরা কোনো দিনই ক্লিক করতে পারবো কি না আমার সন্দেহ আছে। তারপরও ঠিকই ছিল আগে বেশি উইকেট পড়ে গেছে সেটাই ছিল সমস্যা। শেষ দুই ওভারে ৩০। শেষ ২ ওভারে আমাদের কোনো সেট ব্যাটসম্যান থাকলে হয়তো ২০ রানও চেজ করে ফেলতে পারতাম। শুরুতে উইকেট হারানোয় আমাদের ক্ষতি হয়েছে। আর বোলিংয়ে আমরা হেরে গেছি তা না দশ-পনেরাটা রান বেশি দিয়েছি।’
হারের পরও প্রাপ্তির কথা সামনে রেখে মুশফিক বলেছেন, আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যখন যার পারফরম করার দরকার ছিল তখন সে তা করেছে। আমাদের দল এখন এক জনের ওপর নির্ভরশীল নয়। একজনই ভালো খেলবে আর তার ওপর সব সময় চাপ থাকবে দলটা এখন আর এমন নাই। আমার মনে হয় আমি না পারলেও আমার পেছনে আরো ব্যাটসম্যান আছে যারা কাজটা করতে পারবে।’ তিনি আরো যোগ করে বলেছেন, প্রতিদিন একজনের সমান যায় না। আমাদের পারফরমারের সংখ্যা এখন অনেক বেশি। এ জন্য আমরা দলগতভাবে অনেক ভালো পারফরম করছি। সবাই চিন্তা করে দলই আগে। এটা আগেও ছিল। আমার মনে হয় এই সিরিজে তা আরো বেশি হয়েছে। তাই আমাদের কম্বাইন্ড রেজাল্টটা ভালো হচ্ছে।’গেইমপ্ল্যানিং সম্পর্কে মুশফিক বলেছেন, আপনি যত ভালোই খেলেন না কেন টোয়েন্টি২০তে আপনি ৫-৬ ওভারে ৮০ রান দিয়ে দিলে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করেছিলাম ৭ ওভার থেকে ওদের বেঁধে রাখতে। আপনারা যদি ওদের ব্যাটিং লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে দেখবেন ওরা আমাদের কোনো সুযোগ দেয়নি। ওখান থেকে কামব্যাক করা কঠিন। পাওয়ার প্লে আর ডেথ ওভারের বোলিং আমাদের পরিকল্পনা মতো হয়নি।’
যথারীতি উইকেট নিয়ে কথা বলতে হয়েছে মুশফিকের। বলেছেন, আজকে উইকেটের চরিত্র ভিন্ন ছিল। নতুন বলে আপনার আক্রমণ করতেই হতো। প্রথম ৬ ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের লক্ষ্য ছিল আমরা যদি ২টা উইকেটও হারাই ৬০ প্লাস রান করি। আমাদের সেট ব্যাটসম্যানদের আরো বেশি সময় উইকেটে থাকা দরকার ছিল। ব্যাটসম্যান থাকলে শেষ ওভারেও ২০ রানও হয়তো সম্ভব ছিল। আমার মনে হয় পরিকল্পনায় আরো পরিপক্কতা আনতে হবে। আরো বেশি খেলি; না জিতি- যেন বুঝতে পারি এভাবে খেলতে হয়। এভাবে জিততে হয়।’
আগামী ডিসেম্বরের শেষে আসছে শ্রীলঙ্কা। মুশফিকের মাথায় রয়েছে তাও। বলেছেন, টোয়েন্টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে শুধু চিন্তা করলে হবে না। সামনে শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও সিরিজ রয়েছে। এরপর এশিয়া কাপ। অনেক খেলা আছে। আমাদের বেশি টোয়েন্টি২০ খেলা উচিৎ যেন বুঝতে এই পরিস্থিতিতে আমাদের এভাবে খেলতে হবে। ডেথ ওভারে এভাবে বল করতে হবে। এই চাপগুলো যেন ম্যাচ সিচুয়েশনে অনুশীলন করতে পারি।’
(দিরিপোর্ট২৪/এএস/সিজি/নভেম্বর ০৬, ২০১৩)