দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ইসলাম আসার পূর্বে সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতে নারীদের সামাজিক মর্যাদা দেয়া তো দূরের কথা তাদের বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত ছিলো না। কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণের কথা শ্রবণ করার সাথে সাথেই সকলের মুখ কালো হয়ে যেতো। তাকে জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলার জন্য সকলে আয়োজনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতো এবং এই কন্যা সন্তানকে মাটিতে জীবন্ত প্রোথিত করাকেই নিজেদের জন্য সম্মান, মর্যাদা ও পুণ্যের কাজ বলে মনে করতো। জাহেলী যুগের সেই সময়কার ভয়বহ এই অবস্থার কথা তুলে ধরে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

‘জাহেলী যুগের যখন কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তাদের চেহারা কালো হয়ে যায়। সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে । তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। আপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পুঁতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ! (সুরা নাহল: আয়াত ৫৮, ৫৯)

ইসলামপূর্ব আরব সমাজে নারীদের অবস্থা এমনই ছিলো। এমনকি ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্মে নারী জাতির অধিকারের উল্লেখযোগ্য কোনো স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।

হিন্দুধর্মে নারী জাতিকে মৃত্যু, নরক, সর্প, বিষ ও আগুন থেকেও মারাত্মক বলা হয়েছে। স্বামী ছাড়া নারী জাতির আলাদা কোনো অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় নি। যার কারণে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকেও তার স্বামীর সাথে সহমরণে যেতে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে।

খ্রীস্টান ধর্মে নারী জাতিকে চরম লাঞ্ছনার বস্তু বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই তো খ্রীস্টান পাদ্রী মি. সেন্ট টার্টুলিয়ামের মতে, নারী হচ্ছে বন্য জন্তুর চেয়েও অধিক বিপজ্জনক। অন্য আরেক পাদ্রী সেন্ট ক্রিয়ান নারীকে বীষধর সাপের সাথে তুলনা করে তার থেকে দূরে সরে থাকতে বলেছেন। সপ্তদশ শতকে খ্রিস্টধর্মের রাজধানী রোমে বিত্তবানদের একটি কাউন্সিল সমবেত সকল শীর্ষ ব্যক্তি এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে একমত হয়েছিল যে, নারীর কোন আত্মা নেই।

ইহুদী ধর্মে নারীকে পুরুষের জন্য প্রতারক বলা হয়েছে। তাদের মতে, একজন সতী নারীর চেয়ে একজন পাপিষ্ট পুরুষ বহু গুণে শ্রেষ্ঠ।

বৌদ্ধধর্মে কন্যা সন্তান জন্ম লাভ করাকে অলক্ষুণীয় বলে মনে করা হয়। নারীর কোনো অধিকার আছে বলে স্বীকৃতি দেয় না।

ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্মেই নারী জাতিকে পাপিষ্ট, অলক্ষুণে, অপয়া ও ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের কোনো অধিকার দেয়া তো দূরের কথা, তাদেরকে মানুষ বলেই স্বীকার করা হয়নি। তারা নারীদের কেবলমাত্র ভোগের পণ্য হিসেবেই গণনা করতো।

এমনিভাবে সর্বত্রই যখন নারী জাতির এমন লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর অসম্মান ঠিক সেই বিভীষিকাময় মুহূর্তে ইসলাম এসে তৎকালীন সেই বর্বর যুগের অমানুষিক জুলুম থেকে নারীকে মুক্ত করেছে। ইসলামই একমাত্র দীন-যা নারী জাতিকে ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের যথাযথ অধিকার।

ইসলাম এসে ধাপে ধাপে নারী জাতিকে তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, সম্মান ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। যেই সমাজে নারী জন্মই পাপ বলে গণ্য হতো সেখানে ইসলাম সর্বপ্রথমই নারীজন্মের অধিকার নিশ্চিত করেছে।

(দ্য রিপোর্ট/একেএ/এনআই/মার্চ ১৪, ২০১৭)