অভিযানে প্রস্তুত সোয়াত টিম
সীতাকুণ্ডে ‘জঙ্গি আস্তানা’ ঘিরে উৎকণ্ঠা
চট্টগ্রাম অফিস : জঙ্গি আস্তানা হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পর সীতাকুণ্ডে কলেজ রোড চৌধুরীপাড়ার প্রেমতলার ঘেরাও করা ছায়ানীড় বাড়িটিতে অভিযান আপাততে স্থগিত করেছে পুলিশ। রাতভর বাড়িটি ঘেরাও করে রাখা হবে। ভোরের দিকে ফের অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টিম সোয়াত ঘটনাস্থলে রয়েছে।
এর আগে বুধবার দুপুরে পুলিশ বাড়িটিতে অভিযান চালাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে বাড়ির ভিতর থেকে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে একজন ওসিসহ ২ জন পুলিশ আহত হয়। এর পর পুলিশ অভিযান থেকে পিছু হটে।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে রাতে অভিযান না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঘটনাস্থলে থাকা জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বিষয়টি জানান।
ইতোপূর্বে ছায়ানীড় বাড়ি থেকে অন্যান্য বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়েছে পুলিশ। সেখানে মাইক লাগিয়ে বিকেল থেকে জঙ্গি সদস্যদের বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করা হলেও তারা সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তাই পুলিশ সেখানে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে দুপুরে সীতাকুণ্ড সদরের নামার বাজার এবং কলেজ রোড চৌধুরীপাড়া এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে দুটি বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান চালায় পুলিশ।
বুধবার দুপুরে থেকে গোপন খবরে পুলিশ দুটি ঘেরাও করে তল্লাশি শুরু করলে কলেজ রোডের বাড়ি থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটনানো হয় বলে পুলিশ জানায়। এতে দু্ই পুলিশ আহত হয়েছে। পুলিশ ঐ বাড়ি থেকে অস্ত্র ও গোলা বারুদ উদ্ধার এবং এক শিশুসহ স্বামী-স্ত্রীকে আটক করেছে। সেখান থেকে উদ্ধার করা বিভিন্ন বিস্ফোরক, গ্রেনেড নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেছেন, জঙ্গি আস্তানা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। পুলিশ ২ জনকে আটক করেছে। আমাদের দুই পুলিশ আহত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার (১৫ মার্চ) বিকেলে কলেজ রোড চৌধুরীপাড়ার প্রেমতলাস্থ ছায়ানীড় ভবনের নিচতলার একটি বাসায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে জঙ্গিরা হ্যান্ডগ্রেনেড ছুঁড়ে। এতে সীতাকুণ্ড থানার ওসি (তদন্ত) মোজাম্মেলসহ দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। এরপর পুলিশ সদস্যরা পিছু হটেন। বর্তমানে বাইরে থেকে পুরো ভবনটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ এবং গাছের সাথে মাইকিং করে ভিতরে থাকা জঙ্গি সদস্যদের বের হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ১৫-১৬ দিন আগে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে কিছু লোক ছায়ানীড় ভবনের নিচতলার বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল। ওই ভবনে আরও কয়েকটি পরিবার ভাড়া থাকেন। গোপন খবরের ভিত্তিতে বুধবার দুপুরে পুলিশ প্রথমে নামার বাজার ল্যাবরেটরির পাশের একটি বহুতল ভবন থেকে একজনকে আটক করার পর তার স্বীকারোক্তিতে প্রেমতলার ছায়ানীড় ভবন ঘেরাও করে অভিযান চালাতে গেলেই নিচতলার একটি বাসা থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পরপর ৩টি গ্রেনেড ছুড়ে মারে। এতে সীতাকুণ্ড থানার ওসি তদন্তসহ ২ পুলিশ আহত হয়। বাসার ভিতরে ৩ জন রয়েছে বলে সীতাকুণ্ড থানার ওসি ইফতেখার হাসান।
এদিকে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের খবর পেয়ে চট্টগ্রাম শহর থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম এবং জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।
এ ঘটনাকে ঘিরে দুপুর থেকে হাজার হাজার মানুষ দুটি এলাকায় ভিড় জমিয়েছে। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খাচ্ছে। এলাকায় আশপাশের মানুষ চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে সময় পার করছে।
(দ্য রিপোর্ট/এপি/এনআই/মার্চ ১৫, ২০১৭)