দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেদখল তিব্বত হল উদ্ধার যাত্রা করবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রবিবার সকালে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা তিব্বত হল অভিমুখে যাত্রা করবে বলে জানিয়েছেন হল উদ্ধার আন্দোলনের সমন্বয়ক শরীফুল ইসলাম।

কর্মসূচি সম্বন্ধে শরীফুল ইসলাম দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘রবিবার সকালে শিক্ষার্থীরা তিব্বত হল অবরোধ করবে। হলটি দখল করে তৈরি হওয়া গুলশান আরা মার্কেটে তিব্বত হলের সাইনবোর্ড টানিয়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।’

এদিকে কর্মসূচি পালনে হাজী সেলিম কিংবা পুলিশ প্রশাসনের বাধার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো ধরনের বাধা আসলে তা উপেক্ষা করেই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শরীফুল ইসলাম।

তবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখলেও হলটি নিজের সম্পত্তি বলে দাবি করছেন সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। দ্য রিপোর্টকে সেলিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলের কাগজপত্র দেখাতে পারলে জায়গাটি ছেড়ে দেব।’

গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে হল উদ্ধারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে ২০১১ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ড. হাবিবুর রহমান হল উদ্ধার হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করলেও তা আর অগ্রগতি হয়নি।

তবে হলগুলো উদ্ধারে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘হল উদ্ধার করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নয়। সরকারকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে।’

উল্লেখ্য, পাটুয়াটুলী ওয়াইজঘাট এলাকার ৮ ও ৯ নম্বর জিএল পার্থ লেনের ৮.৮৮৯ কাঠা জায়গায় তিব্বত হলটি অবস্থিত ছিল। ৯০ এর দশকে এরশাদ সরকার ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দিলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে স্থানীয়রা হলটির দোতালায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. হাবিবুর রহমান হলটি থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত সেখানে তিব্বত হল লেখা সাইনবোর্ড থাকলেও শিক্ষার্থীরা আর হলটিতে ফিরে যেতে পারেননি।

একই স্থানে ২০০১ সালে হাজী সেলিম স্ত্রীর নামে গুলশান আরা সিটি মার্কেট নির্মাণ শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে হল দখলের অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকবার আন্দোলনে নামলেও তা সফল হয়নি।

২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গঠিত ৬ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি তিব্বত হলটি বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ দেওয়ার সুপারিশ করে। একই বছরের ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভূমি মন্ত্রণালয়ে হলটি দীর্ঘমেয়াদি লিজের আবেদন করে। ৯ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেয়।

২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি আইনগত সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলগুলো লিজের পরিবর্তে অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিতে পারে বলে জানায় জেলা প্রশাসক। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হলটি উদ্ধারে বেশ কয়েকবার চেষ্টা চালালেও সরকারের সহযোগিতা পায়নি তারা।

(দ্য রিপোর্ট/এলআরএস/এনডিএস/এএল/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৪)