হোয়াইটওয়াশের কালিমা বাংলাদেশের
স্পোর্টস এডিটর, দ্য রিপোর্ট : শেষটাও ভালো হলো না। বরং হোয়াইটওয়াশে শেষ হয়েছে সিরিজ। শনিবার শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেনে-হেঁচড়ে ২৪০ রানের পর কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু রাতে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা; তা মামুলির চেয়ে মামুলি বানিয়ে ছেড়েছেন। ১৫ বল হাতে রেখে; সঙ্গে ৬ উইকেটের জয়; তা-ই সাক্ষী দিচ্ছে। সফরকারীরা বোনাস হিসেবে পেয়েছে কৌশিল পেরেরার সেঞ্চুরিও। অথচ ৪ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার; কুমার সাঙ্গাকারা, তিলকারত্নে দিলশান, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও লাসিথ মালিঙ্গাকে ছাড়াই শেষ ওয়ানডে ম্যাচে নেমেছিলেন তারা। অন্যদিকে বাংলাদেশকে নামতে হয়েছে দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই।
বলে নেয়া ভালো ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের হার আগেই নিশ্চিত হয়েছে প্রথম ২ ম্যাচের পর। বাকি ছিল হোয়াইটওয়াশ। সেখানেও সফল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ সর্বশেষ সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে ভিন্ন স্বপ্নে বিভোর থাকার শতভাগ খেসারত দিয়েছে চলতি সিরিজে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ৬ ওভার পার করা এনামুলের ১৬ বলের বিপরীতে মাত্র ২ রান। প্রাসাদের প্রথম শিকার তিনি দলীয় ১৭ রানে। অপর ওপেনার শামসুরও থেমেছেন ২৫ রানে; দলের ৬২। শামসুর-মুমিনুল পার করেছেন ১০.২ ওভার। তুলেছেন যুগলবন্দি ৪৫ রান। তৃতীয় উইকেটেও ৪৬ রান মাত্র ৭.৩ ওভারে। এবার ফিরে গেছেন মুমিনুল। তার ব্যাটেই বাংলাদেশ পেয়েছে একমাত্র হাফ সেঞ্চুরি। দলীয় ১০৮ রানে মুমিনুল আত্মঘাতী বলির শিকার হয়েছেন ব্যক্তিগত ৬০ রানে। ৬০ বলে ওই রানে থাকা মুমিনুল আউট হয়েছেন সরাসরি থ্রো থেকে। ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা ভিথানেজের ওই ফ্রোটিকেই ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট ভাবলেও ভাবা যেতে পারে। আর মাত্র ২২ রান পর অধিনায়ক মুশফিক চলে যাওয়ায় নিশ্চিত হয়েছে রানের পুঁজির বিষয়টি। ৩০ রানে থাকা সেনানায়েকের ঝুলিয়ে দেয়ার কৌশেলে বোকা বনেছেন। সেনানায়েকের বলে বিগ হিটের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মিস টাইমিংয়ে পয়েন্টে থাকা প্রসাদের হাতে তা জমা হয়েছে। মুমিনুল-মুশফিক জুটির পর পর নাঈম-নাসিরের কিছুক্ষণ রান। না, পঞ্চম উইকেট ছিল একটু রানেরই। নাঈম-নাসিরের ৫৪ রান। এটাই সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ। এখানে উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টাই ছিল আসল কাজ। আর অষ্টম উইকেটে সোহাগ-শফিউল ৩১ রান বাংলাদেশের ইনিংসের ব্যতিক্রম। তারা খেলেছেন মাত্র ২৫ বল। এর মধ্যেই ৩-৩টি ছক্কাও রয়েছে। দলীয় ৪৬ ও সেনানায়েকের করা ৮ম ওভারে সোহাগের ব্যাটে ঝর দেখেছে শ্রীলঙ্কা। সোহাগ প্রথম বলেই ওয়াইডিশ লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়েছেন সেনানায়েকের গুড লেন্থের বলটি। অবশ্য দর্শনীয় প্রচেষ্টায় বলটি ধরার চেষ্টা করেছেন প্রসাদ। তার হাতে লেগে বলটি সীমানায় আছড়ে পড়েছে। ওই ওভারের শেষ বলেও ফের একই প্রান্ত দিয়ে ছক্কা মেরেছেন সোহাগ। ওই ওভারটিই ছিল রানের বানের ওভার। ১৪ রান তুলেছেন তারা। ৪৮তম ওভারেও সোহাগ তার প্রিয় জায়গা দিয়ে আরেকটি ছক্কা মেরেছেন লাকমলকে। সব মিলিয়ে ৩টি ছক্কায় সোহাগ ১৩ বলে তুলেছেন ২৩ রান। বাংলাদেশের ইনিংসে ৩টি ছক্কাই ছিল। ৭ বল বাকি থাকতে সোহাগ আউট হয়েছেন পেরেরার বলে স্কু্প মারতে গিয়ে।
দলে জায়গা পেয়ে দারুণ বোলিং করেছেন প্রসাদ। শুধু দুই ওপেনারকেই নয়; তিনি ফিরিয়েছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে। লাকমল নিয়েছেন ২টি; তবে দুর্দান্ত রান রেট। ১০ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২৪ রান।
২৪১ রানের টার্গেট নিয়ে নির্বিঘ্নই মনে হয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। ৬০ রানে থিরমান্নে (১৮) ও ভিথানাগেকে (৯) ফিরিয়ে দিয়ে বোলার মাহমুদউল্লাহ নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বোলার মাহমুদউল্লাহ প্রথম বলেই কিপারের হাত বন্দি হয়েছেন থিরমান্নে। আর দারুণ এক বোল্ড দেখেছেন মাহমুদউল্লাহই ভিথোনেজের। ওই ২ আউটের বাইরে বাংলাদেশ দেখেছে শুধু ধীর-স্থির ব্যাটিং। ১৩৮ রানের পার্টনারশিপের সঙ্গে ২২তম ম্যাচে কৌশল পেরেরার ওয়ানডের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। চান্দিমালের দায়িত্বশীল অধিনায়োকোচিত ৬৪ রানের ইনিংস।
এই ম্যাচেও ক্যাচ ড্র দেখেছেন দর্শকরা। রুবেলের বলে ফিরে যেতে পারতেন পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে। ১৩ রানে থাকা থিরমান্নের কষ্টসাধ্য ক্যাচটি ঝাপিয়ে পড়েও তালুবন্দি করতে পারেননি নাসির। দলের রান তখন ২২। পরে আরেকটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন ডিপ স্কয়ার লেগে। ভিথানাগের তখন মাত্র ৪ রান। দলের ৫৩। এর বাইরে তৃতীয় ম্যাচে ক্যাচ ড্রপ হয়নি।
বাতি নিভে যাওয়ার আগে শেষ বার জ্বলে ওঠার মতো; শিশিরস্নাত রাতের শেষ আনন্দ এনেদিয়েছেন পেসার রুবেল। দলীয় ১৯৮ রানের মাথায় পেরেরা এবং ২০৫ রানে দিনেশ চান্দিমালকে ফিরিয়েছেন ওই পেসার। বাকি পথে অবিচল ছিলেন ম্যাথুস-প্রিয়াঞ্জন। তারা ৪৭.৩ ওভারেই জয় নিশ্চিত করেছেন। যার সঙ্গে জড়িয়ে থাকছে ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশের যাতনাও। প্রথম ম্যাচে দারুণ লড়াই করে হারলেও পরের ২ ম্যাচ হেরেছে একেবারে অসহায়ভাবে।
২০১১ সালের পর বাংলাদেশ দেশের মাটিতে ফের হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ওইবার পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল।
সামনে ২ আসর। রবিবার থেকেই এশিয়া কাপের দামামা শুরু। তারপরও টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপ। ঠিক কড়া নাড়ার সময়ে এভাবে বাংলাদেশের হোয়াইটওয়াশকে শঙ্কা হিসেবেই দেখছেন মুশফিকুর রহিম। তাই ম্যাচ শেষে স্রেফ বলেছেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও আমাদের সমস্যায় পড়তে হবে।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২৪০/৮, : ৫০ ওভার ( শামসুর ২৫, মুমিনুল ৬০, মুশফিক ৩০, নাঈম ৩২, নাসির ৩৮, সোহাগ ২৩, শফিউল ১৫*; ধাম্মিকা ৩/৪৯, লাকমল ২/২৪, থিসারা ১/৩৯, সেনানায়েকে ১/৪৬)।
শ্রীলঙ্কা : ২৪৬/৪, ৪৭.৩ ওভার (কৌশল ১০৬, চান্দিমাল ৬৪, ম্যাথুস ২০*, প্রিয়াঞ্জন ২২*; মাহমুদুল্লাহ ২/৩৮, রুবেল ২/৬৯)।
ফল : শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা : কৌশল পেরেরা |
(দ্য রিপোর্ট/এএস/ওআইসি/ ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৪)